বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫

|১৪ আশ্বিন ১৪৩২

সদ্য সংবাদ অনলাইন

প্রকাশিত: ১২:২৭, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপডেট: ১৩:৪৩, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

লাদাখে জেন–জিদের আন্দোলন কতটা চ্যালেঞ্জে ফেলছে মোদি সরকারকে?

লাদাখে জেন–জিদের আন্দোলন কতটা চ্যালেঞ্জে ফেলছে মোদি সরকারকে?
ছবি: সংগৃহীত

লাদাখে ছয় বছর ধরে চলা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হঠাৎ সহিংস রূপ ধারণ করায় ভারতের মোদি সরকার বড় রাজনৈতিক সংকটে পড়েছে। ২০১৯ সালে বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর রাজনৈতিক অধিকার হারানোর অভিযোগে লাদাখের জনগণ মূলত জেন-জিরা এবার আন্দোলনে নেমেছে। সাম্প্রতিক সহিংসতা সেই আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দিয়েছে।

লাদাখ ভারতের কৌশলগত সীমান্ত অঞ্চল। গত বুধবার আঞ্চলিক রাজধানী লেহতে জেন–জি প্রজন্মের তরুণদের নেতৃত্বে বিক্ষোভকারীরা বিজেপির আঞ্চলিক কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে অন্তত চারজন নিহত হয়, আহত হন অনেকে। আহতদের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যও রয়েছে। লাদাখ অ্যাপেক্স বডি নামে নাগরিক মঞ্চের নেতৃত্বে এত দিন ধরে অহিংস পথে মিছিল ও অনশনের মাধ্যমে আন্দোলন চলছিল । কিন্তু অনশন ১৫ দিনে গড়ালে দুই প্রবীণ কর্মীর শারীরিক অবস্থা সংকটজনক হয়ে পড়ে, এ সময় সরকারের আলোচনায় বিলম্ব তরুণদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি করে। এই ক্ষোভ থেকেই শান্তিপূর্ণ অনশন সহিংস বিক্ষোভে রূপ নিয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের মূল দাবি মূলত তিনটি-
১. রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া। ২০১৯ সালে মোদি সরকার জম্মু–কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে দুটি ভিন্ন কেন্দ্রশাসিত রাজ্যে ভাগ করে।
২. সংবিধানে সাংবিধানিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ভূমি, সংস্কৃতি ও সম্পদ বহিরাগতদের দখলে না যাওয়ার নিশ্চয়তা।
৩. নির্বাচিত আইনসভা প্রতিষ্ঠা। জম্মু–কাশ্মীরে পরবর্তীতে আইনসভা গঠন হলেও লাদাখে আজও তা হয়নি। 

সরকারি প্রতিক্রিয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিক্ষোভকারীদের বিশৃঙ্খল জনতা হিসেবে উল্লেখ করে  জানিয়েছে, তাদের হামলায় ৩০ জনের বেশি নিরাপত্তাকর্মী আহত হয়েছেন, আর পুলিশের আত্মরক্ষার গুলিতেই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ, সোনম ওয়াংচুক নেপালের সাম্প্রতিক জেন–জি আন্দোলন ও আরব বসন্তের প্রসঙ্গ টেনে জনগণকে উসকে দিয়েছেন। অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা বলছে, কেন্দ্র বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও কোনো সমাধান করেনি।

লাদাখের অবস্থান ভৌগোলিক ও কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত সংবেদনশীল। পূর্বদিকে চীন, পশ্চিমে পাকিস্তান—দুটি পরমাণু শক্তিধর প্রতিবেশীর সীমান্ত ঘেঁষে অবস্থিত এ অঞ্চল ভারতের জন্য শুধু রাজনৈতিক নয়, সামরিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। চীনের সঙ্গে লাদাখের সীমান্ত প্রায় ১,৬০০ কিলোমিটার দীর্ঘ, ফলে এখানে অস্থিরতা ভারত–চীন উত্তেজনাকেও আরও জটিল করে তুলতে পারে। লাদাখবাসীর আন্দোলনের ইতিহাসও দীর্ঘ। ১৯৮১ ও ১৯৮৯ সালে সাংবিধানিক অধিকার ও রাজনৈতিক স্বীকৃতির দাবিতে প্রাণহানি ঘটেছিল। তবে এবারের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষকে স্থানীয়রা লাদাখের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ দিন হিসেবে দেখছেন।

মূলত, লাদাখের জেন–জি আন্দোলন শান্তিপূর্ণ পথ থেকে সহিংসতায় রূপ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য বড় সংকেত দিয়েছে। এটি শুধু একটি আঞ্চলিক বিক্ষোভ নয়, বরং সাংবিধানিক অধিকার, প্রজন্মগত ক্ষোভ এবং ভূরাজনৈতিক নিরাপত্তার জটিল এক সমীকরণ, যা সামলানো এখন মোদি সরকারের জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ।

সূত্র: এএফপি, রয়টার্স

 

সদ্য সংবাদ/এমটি

সর্বশেষ