বুধবার, ০৬ আগস্ট ২০২৫

|২০ শ্রাবণ ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১২:৫৪, ২১ জুলাই ২০২৫

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যা নিয়ে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য

মিটফোর্ডে ব্যবসায়ী হত্যা নিয়ে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য
ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর পুরান ঢাকায় মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগ হত্যাকাণ্ডের পেছনে তার নিজের কোনো পরিকল্পনা ছিল না বলে আদালতে জবানবন্দিতে দাবি করেছেন মামলার প্রধান আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন। তিনি বলেন, হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন পলাতক আসামি সারওয়ার হোসেন টিটু।

রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম মো. মাহবুবুর রহমানের আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে মহিন জানান, সোহাগের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত কোনো দ্বন্দ্ব ছিল না। বরং দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসায়িক বিরোধ চলছিল সোহাগ ও টিটুর মধ্যে। এই বিরোধ থেকেই টিটুর পক্ষ নিয়েই সোহাগের ওপর তারা হামলা চালান।

ঘটনার দিন টিটু, মহিনসহ আরও কয়েকজন মিলে সোহাগকে হুমকি দিতে গিয়েছিলেন। সেসময় সোহাগ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে টিটু, মহিন, টিটন গাজী, আলমগীর, লম্বা মনির, অ্যাম্বুলেন্সচালক সজীব ব্যাপারীসহ অন্যরা একযোগে তাকে মারধর শুরু করেন।

জবানবন্দিতে মহিন জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সোহাগ ভাঙারি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করতেন। তিনি এবং টিটন তখন বঞ্চিত ছিলেন। সোহাগ তাদের বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের লোকজন দিয়ে হেনস্তা করতেন বলেও দাবি করেন তিনি।

সরকার পরিবর্তনের পর মহিন ও তার সহযোগীরা ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইলে সোহাগকে ব্যবসা ছাড়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন। ঘটনার দিনও তারা একই উদ্দেশ্যে তার কাছে যান। তখনই উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের একপর্যায়ে সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ড ঘটে।

মহিন বলেন, যারা হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই সোহাগের কাছে কোনো না কোনোভাবে পূর্বে হয়রানির শিকার হয়েছেন। সেই জমানো ক্ষোভ থেকেই তারা পাথর দিয়ে আঘাত করে সোহাগকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন।

পুলিশ ও তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ভাঙারি ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সোহাগের সঙ্গে টিটন ও মহিনের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব ছিল। পূর্বপরিকল্পিতভাবেই সোহাগকে হত্যা করা হয়েছে বলে তাদের ধারণা।

মামলার দ্বিতীয় আসামি সারওয়ার হোসেন টিটু এখনো পলাতক রয়েছেন। তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলে জানান কোতোয়ালি থানার ওসি ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান।

তিনি আরও জানান, এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে এবং বাকি জড়িতদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, রিমান্ড শেষে মহিনকে আদালতে হাজির করা হলে তিনি স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে সম্মতি জানান। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেন। আদালত তার জবানবন্দি গ্রহণ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এর আগে ১০ জুলাই প্রথম দফায় এবং ১৫ জুলাই দ্বিতীয় দফায় মহিনের মোট ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

গ্রেপ্তার হওয়া ৯ আসামির মধ্যে রয়েছেন-মাহমুদুল হাসান মহিন, টিটন গাজী, মো. আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, তারেক রহমান রবিন, সজীব ব্যাপারী, মো. রাজিব ব্যাপারী, নান্নু কাজী এবং রিজওয়ান উদ্দীন ওরফে অভিজিৎ বসু।

১৭ জুলাই লম্বা মনির, আলমগীর ও টিটন এবং ১৯ জুলাই সজীব ব্যাপারী আদালতে জবানবন্দি দেন। রিমান্ড শেষে রাজিব বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
 

সর্বশেষ