যাত্রাবাড়ী-শরীয়তপুর রুট
চাঁদা না দেওয়ায় বাস চলাচল বন্ধ, অভিযোগ যুবদল নেতার বিরুদ্ধে

চাঁদা না দেওয়ায় ঢাকা-শরীয়তপুর রুটের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে একদিকে সাধারণ যাত্রীদের পড়তে হচ্ছে চরম দুর্ভোগে, অন্যদিকে ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন বাস মালিকরা। অভিযোগ উঠেছে, যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান ফাহিম ও তার লোকজন এই অবরোধ ও হামলার পেছনে জড়িত।
শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস পরিবহণ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা গত ৫ আগস্টের পর থেকে যাত্রাবাড়ীতে বাস পরিচালনার জন্য নিয়মিত চাঁদা দিয়ে আসছিলেন। গাড়ি প্রতি ৫০০ টাকা করে মাসে প্রায় ৭ লাখ টাকা এবং নির্দিষ্ট পাম্প থেকে তেল কেনার সময় প্রতি গাড়িতে ১ হাজার টাকা অতিরিক্ত দিতে হতো। তবে সম্প্রতি ফাহিম চাঁদার পরিমাণ ব্যাপকভাবে বাড়িয়ে দেন। মালিকরা তা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বাস চলাচলে বাধা দেওয়া শুরু হয়।
গত তিন দিনে যাত্রাবাড়ী এলাকায় শরীয়তপুর সুপার সার্ভিসের অন্তত ২০টি বাস ভাঙচুর করা হয়েছে এবং চালক-হেলপারদের ওপর হামলা চালিয়ে মোবাইল ফোন ও নগদ অর্থ লুট করে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে প্রায় ৩০ জন চালক ও শ্রমিক আহত হয়েছেন। আহতদের ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
বাস শ্রমিক রুবেল, মনির ও শাহিন জানান, ফাহিমের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় এবং বাসে যাত্রী থাকা অবস্থাতেও গাড়িতে ভাঙচুর চালায়।
বাস মালিক সিরাজুল ইসলাম মাদবর বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গাড়ি কিনেছি। প্রতিদিনই লোকসান গুনছি। ফাহিমের দাবিকৃত চাঁদা দিতে না পারায় বাস চলাচলে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি হয়েছে।’
শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস পরিবহণের চেয়ারম্যান ফারুক আহম্মেদ তালুকদার বলেন, ‘আমরা সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব—সব জায়গায় অভিযোগ জানিয়েছি, কিন্তু এখনো কোনো কার্যকর প্রতিকার পাইনি।’
এ ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শরীয়তপুরবাসী। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শরীয়তপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক ইমরান আল নাজির লিখেছেন, ‘সরকারের চেয়েও শক্তিশালী হতে পারে, কিন্তু জনতার চেয়ে নয়। যদি শরীয়তপুরবাসী যাত্রাবাড়ীতে একত্র হয়, তবে কেউ আর নিরাপদে থাকতে পারবে না।’
অভিযোগের বিষয়ে সাবেক যুবদল নেতা ফাহিম বলেন, ‘আমার রুট পারমিট থাকা সত্ত্বেও শরীয়তপুর বাস মালিকরা বাধা দিচ্ছেন। আমি কাউকে চাঁদার জন্য চাপ দিইনি। চাঁদাবাজি করে থাকলে প্রমাণ দিন, আমি আইন মেনে মাথা পেতে নেব।’
শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। ডিএমপির ওয়ারী বিভাগের উপকমিশনারকে জানানো হয়েছে, যাতে বাস চলাচল নির্বিঘ্নে চালু রাখা যায় ও ভুক্তভোগীরা আইনি সহায়তা পান।’ সূত্র: কালের কণ্ঠ