মাদকসম্রাজ্ঞী আরফিনার বাড়িঘর রেখে থাকেন বস্তির ভাঙা ঘরে
খোলস পাল্টিয়ে মাদকের ব্যবসাকে নিয়ে গেছেন অবৈধ অর্থ উপার্জনের এক ধাপ এগিয়ে। ৫ আগস্টের আগে একজন সক্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা হয়ে মাদক ব্যবসা করেছেন, ৫ আগস্টের পর মাসোহারা দিয়ে মাদক ব্যবসাকে এখনো চলমান রেখেছেন।
টঙ্গীকে অনেকেই চেনেন শিল্পনগরী হিসেবে। কেউ কেউ আবার বলেন, টঙ্গী শব্দটার নিচে যেন দুটি শহর লুকানো—একটাতে কারখানার ধোঁয়া, আরেকটাতে মাদকের থাবা। ব্যাংকের মাঠ বস্তিটা সেই দ্বিতীয় শহরের রাজধানী। দিনের শেষে এখানে বাতাসেও সন্দেহের গন্ধ মিশে থাকে।
এই অন্ধকার গলির সবচেয়ে আলোচিত চরিত্র আরফিনা বেগম। নাম শুনলেই অনেকে ফিসফিস করে বলেন, “ওটাই জামালের বউ।” কিন্তু ওর আসল পরিচয় আরও ভারীটঙ্গীর মাদকসম্রাজ্ঞী তিনি।
সম্পদের পাহাড়, তবু বস্তির টিনের ঘরে কেন? যেন নিজের আখড়া ছেড়ে এক ইঞ্চিও সরে যেতে চান না। অথচ কথিত আছে, তার নামে আছে গাড়ি, বাইরে আছে বাগানবাড়ি, ব্যাংক হিসাবেও অঙ্কের পর নাকি হাত কাঁপে।
তাহলে বস্তিতেই কেন?
উত্তর একটাই—বস্তির প্রতিটি বাঁক, প্রতিটি ছায়া, প্রতিটি দরজার আড়ালে লুকিয়ে আছে তার ব্যবসার ঝুঁকিমুক্ত পথ। বস্তিই তাকে দেয় নিরাপত্তা আর নেশার সাম্রাজ্য চালানোর গোপন আশ্রয়।
টঙ্গীজুড়ে অনেক সময় ফেনসিডিলের দেখা না মিললেও আরফিনার কাছে নাকি সবসময় মজুত থাকে। তার ভাই শ্রাবণ, স্বামী জামাল আর সহযোগী সালমা মিলেই তার পুরো অপারেশন চলমান রাখে।
বস্তিতে অপরিচিত কেউ ঢুকলে চারপাশের চোখগুলো হঠাৎ ধারাল হয়ে ওঠে। মাদক বিক্রেতারা চেনা মুখ ছাড়া কাউকেই কিছু দেন না।
৫ আগস্টের পর আরফিনাকে একবারও আটক করতে পারেনি পুলিশ। স্থানীয়ভাবে গুঞ্জন আছে, কয়েকজন অসাধু পুলিশ সদস্য আর কিছু প্রভাবশালীর নিয়মিত মাসোহারা তাকে বস্তিতে সিংহাসনের মতো জায়গা করে দিয়েছে।
রিপন মিয়া, টুক্কু, বাচ্চুর বউ, তাজুর বউ রোজি, মোমেলা, রানী, সুরাইয়া, আমির কানা, রুবিনার জামাই মৃদুল—সবাই মিলে বস্তির নানা মোড়ে গড়ে তুলেছে মাদকের ছোট ছোট দুর্গ। ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা—সবকিছুই নাকি এক হাত দূরে পাওয়া যায়।
টঙ্গী পূর্ব থানার অফিসার ইনচার্জ জানান, বস্তির প্রতিটি স্পটে নজরদারি চলছে। ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রয়েছে।
টঙ্গীর আসল গল্পটা যেন দুই মুখো—একদিকে কারখানার চাকচিক্য, অন্যদিকে বস্তির নেশার সাম্রাজ্য। আর সেই সাম্রাজ্যের রানি আরফিনা—যাকে ঘিরে টঙ্গীর মানুষ এখনো জানে না, তিনি কখন ধরা পড়বেন, আর বস্তির বাতাস আবার কবে স্বাভাবিক হবে।



























