রোববার, ১০ আগস্ট ২০২৫

|২৫ শ্রাবণ ১৪৩২

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৯:২৯, ১০ আগস্ট ২০২৫

‘জুলাই ঐক্য’ নষ্ট করছে আক্রমণাত্মক বক্তব্য: শিবির সভাপতি

‘জুলাই ঐক্য’ নষ্ট করছে আক্রমণাত্মক বক্তব্য: শিবির সভাপতি
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, অন্য ছাত্রসংগঠনের নেতাদের আক্রমণাত্মক বক্তব্যের কারণে ‘জুলাই ঐক্য’ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ জায়গা থেকে সবাইকে সরে আসতে হবে, না হলে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগই বেশি সুবিধা নেবে।

রোববার (১০ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রামের একটি কমিউনিটি সেন্টারে মহানগর উত্তর শিবির আয়োজিত এসএসসি ও দাখিলে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত এমন কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দিইনি যা ঐক্য বিনষ্ট করে। কিন্তু অন্য ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা ১০ মিনিট বক্তব্য দিলে ৯ মিনিটই শিবিরবিরোধী কথা বলেন। এতে বিভ্রান্তি ও অনৈক্য তৈরি হচ্ছে, যা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের জন্য ক্ষতিকর।

তিনি আরও বলেন, পতিত ফ্যাসিস্টরা বসে নেই। কেউ কেউ হেলিকপ্টারে পালিয়ে গেলেও, বড় একটি অংশ এখনও দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে সক্রিয়। তারা লুটপাটের অর্থ ব্যবহার করে দেশে অরাজকতা তৈরি করছে। গোপালগঞ্জে প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা ও সাবেক এমপিদের বিনিয়োগেই সাম্প্রতিক ঘটনা ঘটেছে। আমাদের মধ্যে যত অনৈক্য থাকবে, তারাই তত সুযোগ নেবে।

ছাত্রদলসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতাদের আচরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু নেতা রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার অভাবে শিশুসুলভ আচরণ করছেন, যা দায়িত্বজ্ঞানহীন। রাজনীতি সম্পর্কে যারা যত বেশি জানবে, তারা তত বেশি দায়িত্বশীল হবে। ছাত্রদলের এক নেতা বলেছেন, শিবিরকে বুঝতে হলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে হবে। আমি মনে করি, তিনি যথার্থ পরামর্শ দিয়েছেন। কারণ মাঠের রাজনীতিতেই প্রকৃত বোঝাপড়া তৈরি হয়। এতে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যও বাড়ে।

তিনি জানান, ছাত্ররাজনীতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। ঢাবিতে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী রাজনীতি চায় না। এর মূল কারণ ছাত্রলীগের দখলদারিত্ব, বৈষম্য ও টর্চার সেল সংস্কৃতি। আমরা শিক্ষার্থীদের এই মনোভাবকে সম্মান করি। তাই আমরা ঘোষণা দিচ্ছি, শিবির হলভিত্তিক রাজনীতি করবে না, কেবল ক্যাম্পাসভিত্তিক রাজনীতি করবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতির ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ার ইঙ্গিতপূর্ণ বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একজন ছাত্র নেতার কাছ থেকে নির্বাচন বন্ধ রাখার বক্তব্য আশা করা যায় না।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, শিবির ৯০ শতাংশ সময় শিক্ষাবিষয়ক কাজ করে এবং মাত্র ১০ শতাংশ সময় রাজনীতি করে। আমরা শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার গাইডলাইন দিই, নৈতিকতা ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করি। দেশে বর্তমানে সৎ নাগরিকের অভাব, ফলে অনেক ক্ষেত্রেই মূল্যবোধের সংকট তৈরি হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমরা এস আলমের মতো দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী, হারুণের মতো বিতর্কিত পুলিশ অফিসার, হাসিনার মতো ক্ষমতালোভী প্রধানমন্ত্রী কিংবা প্রশান্ত কুমারের মতো বিতর্কিত শিক্ষক হইয়ো না। তোমরা হও মাহরীন চৌধুরির মতো আদর্শ ও দৃঢ় নৈতিকতাসম্পন্ন শিক্ষক।

অনুষ্ঠানে মহানগর উত্তর শিবিরের সভাপতি তানজীর হোসেন জুয়েল সভাপতিত্ব করেন। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন ইউরোপিয়ান কমিশনের এশিয়ান প্রতিনিধি আশিকুর রহমান, শিবিরের কেন্দ্রীয় মাদ্রাসা বিষয়ক সম্পাদক আলাউদ্দিন আবীর এবং মহানগর জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির নজরুল ইসলাম। সংবর্ধনায় ১,২০০ এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীকে সম্মাননা দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত বিষয়: