ব্যাংক লুটপাট তদন্তে সাবেক গভর্নরদের নথি তলব

গত ১৫ বছরে ঋণ জালিয়াতি ও লুটপাটের মাধ্যমে ব্যাংক খাত ধ্বংসের অভিযোগে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
এ লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো এক চিঠিতে সাবেক তিন গভর্নরসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ২৩ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ নথি তলব করা হয়েছে।
চিঠিতে আওয়ামী লীগ শাসনামলে দায়িত্ব পালনকারী তিন সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, ফজলে কবির ও আব্দুর রউফ তালুকদারের সংশ্লিষ্ট নথি চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ২০০৯ সালে ঋণ খেলাপিদের পুনঃতালিকাভুক্তির পর গৃহীত নীতিমালা এবং এর আওতায় বিশেষ সুবিধা পাওয়া বিভিন্ন গ্রুপের ঋণ সংক্রান্ত তথ্যও চাওয়া হয়েছে।
সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর তালিকায় রয়েছে বেক্সিমকো গ্রুপ, এম আর গ্রুপ, রতন গ্রুপ, কেয়া গ্রুপ, যমুনা গ্রুপ, থার্মেক্স গ্রুপ, শিকদার গ্রুপ, বিবিএস গ্রুপ, আব্দুল মোনেম গ্রুপ ও এনানটেক্স গ্রুপ। এসব প্রতিষ্ঠানের ঋণ অনুমোদন, বিতরণ ও পুনঃতালিকাভুক্তির প্রক্রিয়ার বিস্তারিত দলিলপত্র চেয়েছে দুদক।
এছাড়া বহুল আলোচিত বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির নথিও তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সাবেক গভর্নরদের বিরুদ্ধে রিজার্ভ চুরি, হলমার্ক ও এস আলম গ্রুপের ঋণ কেলেঙ্কারিসহ একাধিক অর্থ কেলেঙ্কারিতে প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও নীতিগত অবহেলার অভিযোগ রয়েছে।
দুদকের ভাষ্যমতে, এসব অনিয়ম, রাজনৈতিক প্রভাব ও দুর্বৃত্তায়িত অর্থনীতির পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের ব্যাংকিং খাত ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তাই নিরপেক্ষ ও পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চাওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট সময়ের নীতিমালা, গাইডলাইন, ঋণ মঞ্জুরি প্রক্রিয়ার ফাইল ও অভ্যন্তরীণ নথিপত্র।
বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ন্ত্রিত ঋণ বিতরণ ও রাজনৈতিক প্রভাবে ‘নোংরা ঋণ সংস্কৃতি’ গড়ে ওঠার কারণেই বাংলাদেশে ব্যাংক খাতের স্থিতিশীলতা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুদকের এই অনুসন্ধান যদি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, তবে তা হতে পারে ব্যাংক খাতে শুদ্ধি অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ সূচনা।