জুলাই জাতীয় সনদ ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে: ড. মুহাম্মদ ইউনূস
জুলাই জাতীয় সনদ তৈরির কার্যক্রম ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘এগুলো মহামূল্যবান সম্পদ। জাতি হিসেবে আমরা কোন প্রেক্ষাপটে, কী প্রক্রিয়ায়, কোন সিদ্ধান্তে পৌঁছালাম তা দীর্ঘ মেয়াদে সংরক্ষণ করা ও উন্মুক্ত রাখা দরকার।’
আজ সোমবার (২৬ অক্টোবর) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সমাপনী বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দেবে ঐকমত্য কমিশন। এ সময় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।
সভায় উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, সফর রাজ হোসেন, ড. মো. আইয়ুব মিয়া এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
ড. ইউনূস বলেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের পর থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ পর্যন্ত যত ডকুমেন্ট, আলোচনা, ভিডিও, অডিও ও ছবি রয়েছে, সব সংরক্ষণ করতে হবে। এগুলোই ইতিহাসের চিরজীবন্ত দলিল হয়ে থাকবে। গবেষকরা যেন এগুলো ব্যবহার করতে পারেন, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন জানতে পারে, কীভাবে আমরা ঐকমত্যে পৌঁছেছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই দলিলগুলোই ভবিষ্যতের রাজনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে।’
সভায় প্রধান উপদেষ্টা রাজনৈতিক দল, ঐকমত্য কমিশনের কর্মকর্তা, গবেষক ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘চব্বিশের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মূল দায়িত্বের একটি হলো কাঠামোগত সংস্কার। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সেই সংস্কারের রূপরেখা তৈরি করেছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও সংস্কারের প্রতি আগ্রহ ছিল, তারা আমাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘চব্বিশের ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থান যে সুযোগ দিয়েছে, তা যেন হারিয়ে না যায় সেই লক্ষ্যেই আমরা কাজ করেছি।’
কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে সরকারের দৃঢ়তা ও সাহসিকতা এখন সময়ের দাবি। যারা গণ-অভ্যুত্থানে প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের আত্মত্যাগকে মর্যাদা দিতে এই সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।’
বিচারপতি এমদাদুল হক বলেন, ‘কমিশনের বৈঠকগুলোতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে আন্তরিকতা ছিল, তা গণ-অভ্যুত্থানের সময়কার ঐক্যেরই প্রতিফলন।’
ড. ইফতেখারুজ্জামান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে।’
মনির হায়দার বলেন, ‘যতগুলো শহীদ পরিবারের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, তারা সবাই বলেছেন সংস্কার নিশ্চিত না হলে তাঁদের সন্তানের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে। যারা জুলাইয়ে জীবন দিয়েছে, তারাই এই সনদের মূল ভিত্তি।’
কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে ৩১ অক্টোবর। তবে সদস্যরা জানিয়েছেন, সরকারের প্রয়োজনে নাগরিক হিসেবে তাঁরা ভবিষ্যতেও সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।



























