শুক্রবার, ০৮ আগস্ট ২০২৫

|২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

সদ্য সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৪৭, ১৫ জুলাই ২০২৫

অর্থনৈতিক চাপে তরুণদের বৈবাহিক সম্পর্কে অনীহা

অর্থনৈতিক চাপে তরুণদের বৈবাহিক সম্পর্কে অনীহা

পেশাগত চাপ, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষার কারণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তরুণদের মধ্যে বিয়ে ও সন্তান গ্রহণের আগ্রহ কমে যাচ্ছে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) এবং ইউ গভ (YouGov) পরিচালিত একটি সাম্প্রতিক জরিপে এই চিত্র উঠে এসেছে। জরিপে অংশ নিয়েছে ১৪টি দেশের ১৪ হাজার তরুণ।

বিশ্ব জনসংখ্যা দিবস ২০২৫ উপলক্ষে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আয়োজনে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় জরিপের এই তথ্য উপস্থাপন করা হয়।

সভায় জানানো হয়, বিশ্বে জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়াটা সংখ্যা নয়, বরং প্রজনন হারে পতনই এখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগ। সম্প্রতি প্রকাশিত ‘স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশন’ রিপোর্টে বলা হয়েছে, বিশ্বের জনসংখ্যা আট বিলিয়নের নিচে নেমে যাওয়াটা মূল সমস্যা নয়; বরং সন্তান ধারণে মানুষের আগ্রহ ও সক্ষমতা কমে যাওয়াই মানবজাতির জন্য দীর্ঘমেয়াদি হুমকি।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম। তিনি বলেন, ক্ষমতায়নের প্রথম ধাপ হলো অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা। যখন মানুষ আর্থিকভাবে শক্তিশালী হয়, তখনই ক্ষমতায়নের প্রকৃত পথ খোলে। একটি ন্যায়ভিত্তিক, সম্ভাবনাময় বিশ্ব গড়তে হলে সমতা অর্জনের পথে বাধাগুলোকে দূর করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, তরুণদের সক্ষম করে তুলতে হলে তাদের জন্য গঠনমূলক শিক্ষা, সহায়ক পরিবেশ ও প্রয়োজনীয় সচেতনতা নিশ্চিত করতে হবে। শুধু আকাঙ্ক্ষা দিয়ে নয়, বাস্তব প্রস্তুতির মাধ্যমেই পরিবার গঠনে তরুণরা অগ্রসর হতে পারবে।

জরিপ অনুযায়ী, অধিকাংশ তরুণ একাধিক সন্তান নিতে চাইলেও বাস্তবতা ভিন্ন। প্রায় অর্ধেক তরুণ আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে কাঙ্ক্ষিত সন্তান নিতে পারেন না। প্রতি চারজনের একজন সময়মতো সন্তান নিতে ব্যর্থ হন, আর ৪০ শতাংশ তরুণ পরবর্তীতে সন্তান নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেন।

জরিপে আরও উঠে আসে, প্রায় ১৩ শতাংশ তরুণ অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের পরও সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারেননি। ১৪ শতাংশ তরুণ উপযুক্ত সঙ্গীর অভাবে পরিবার গঠন থেকে পিছিয়ে পড়েন। ১৮ শতাংশ তরুণ কোনো ধরনের পরিবার পরিকল্পনা বা প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা পান না।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, তরুণরাই জাতির ভবিষ্যৎ। রাষ্ট্র গঠনে তাদের অবদান অতুলনীয়। বর্তমানে যেভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং এবং রোবটিকস অগ্রসর হচ্ছে, তাতে সমাজব্যবস্থা ও জীবনের নানা ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে, যার মোকাবিলায় তরুণদের প্রস্তুত রাখতে হবে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল হোসেন জানান, বর্তমানে বিশ্বের মোট জনসংখ্যা প্রায় ৮২৩ কোটি ৪৫ লাখ। প্রতি পাঁচ মিনিটে বিশ্বে প্রায় ১২৫০ শিশু জন্ম নিচ্ছে এবং ১০০০ জনের মৃত্যু হচ্ছে। তাঁর মতে, ২০৫৬ সালে জনসংখ্যা ১০০০ কোটিতে পৌঁছাবে এবং ২০৯৮ সাল থেকে কমতে শুরু করবে।

আলোচনায় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আশরাফী আহমদ স্বাগত বক্তব্য দেন। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জনসংখ্যা, পরিবার কল্যাণ ও আইন) জোবায়দা বেগম ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা. মো. সারোয়ার বারী।

অনুষ্ঠান শেষে জাতীয় পর্যায়ে ১০টি ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ কর্মী ও প্রতিষ্ঠানকে সনদ ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।