মেসের ‘মিল’ নিয়ে ইবির সিনিয়র-জুনিয়রের মারামারি
মেসে মিল (খাবার) কমানো-বাড়ানোকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের সিনিয়র ও জুনিয়র শিক্ষার্থীর মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এতে জুনিয়র শিক্ষার্থী আহত হয়ে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের সজিব এবং অভিযুক্ত সিনিয়র ২০১৯-২০ সেশনের মনিরুল ইসলাম রোহান।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) রাত ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডের একটি মেসে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত শিক্ষার্থী সজিব কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। এ ঘটনায় সজিবের রুমমেট এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স এন্ড জিওগ্রাফি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের নয়নও আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
জানা যায়, ভুক্তভোগী সজিব ও অভিযুক্ত রোহান সহ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী কুষ্টিয়া শহরের পিটিআই রোডের সাবেক এমপি হানিফের বাসার পাশের গলির ওই মেসে থেকে পড়াশোনা করতেন। মেসের নিয়ম অনুযায়ী মাসে ৪৫ টি মিল (খাবারের হিসাব) ধার্য করা ছিল। কিন্তু গত মাসে পূজার ছুটিতে অধিকাংশ শিক্ষার্থী বাড়িতে চলে যাওয়ায় নির্ধারিত মিলের সংখ্যা ৪৫টা থেকে কমিয়ে ৪০ করার প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। এতে মেসেঞ্জারে পোলে ৫ জন সদস্য ৪০টি করার পক্ষে মতামত দিলেও জুনিয়র পেটানো রোহান দ্বিমত জানায়। সে ৪৫টা মিলই ধার্য রাখার পক্ষে অবস্থান নিলে রোহান ও সজীবের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়।
পরবর্তীতে রোহানের রুমমেট নয়ন (জিওগ্রাফি ২১-২২) মেসে আসলে সজিব তাকে বিষয়টি জানায়। পরে উভয়ে মিলে রোহানের সাথে কথা বলতে উপরে যায়। এ সময় উভয়ের মধ্যে আবারও কথা-কাটাকাটি হলে রোহান উত্তেজিত হয়ে যায়। তখন উভয়ের মধ্যে ধস্তাধস্তি ও মারধরের ঘটনা ঘটে। এ সময় সজিবের চোখ থেকে রক্তপাত হতে থাকলেও রোহান তাকে ইচ্ছেমতো তাকে লাথি-কিল-ঘুষি মারতে থাকে বলে অভিযোগ সজিব ও নয়ন। এ সময় বাড়িওয়ালা ও অন্যান্যরা এগিয়ে এসে উভয়কে নির্বৃত্ত করে সজিবকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সজিব বলেন, সিনিয়র ভাই হিসেবে উনি একাধিকবার আমাকে মারার জন্য তেড়ে আসে। এরপর আমার জুনিয়ররা উনাকে রুমের বাইরে নিয়ে যায়। পরে আমার রুমমেট আর আমি কথা বলার জন্য উপরে গেলে উনি আমাদের দেখেই নয়নকে বের করে দেয়। আমার চোখ বরাবর ঘুষি মারার পরেই অনবরত ব্লিডিং হচ্ছিল আমি মাটিতে শুয়ে পরি সে আমার হাত পেছনে মুচড়ে ধরে চোখে-মুখে অন্তত ২০ থেকে ৩০টি ঘুষি মারছে এবং টাইলসের কোনায় আমার পা বারি মারছে। আমি তার বিভাগের জুনিয়র আমি এভাবেই পড়ে যাওয়ার পরেও সে আমাকে অমানবিকভাবে নির্যাতন করছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু ও ন্যায্য বিচার চাই।
সজিবের রুমমেট নয়ন বলেন, ৪০টি মিলের পক্ষে ভোট দেওয়ায় উনি অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে। কথা বলতে গেলে আমাকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়। সজীব এগিয়ে গেলেও ওকেও মারধর করা শুরু করে। আমি আগে এ ধরনের ঘটনার অভিজ্ঞতা না থাকায় ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম। উনি সজিবকে এলোপাথাড়ি মারতেছিল। পরে মার খেয়ে আমরা অন্য সিনিয়রদের ডাকি আর সজিবকে হাসপাতালে নিয়ে আসি। আমার মাথায়ও আঘাত লেগে রক্ত জমাট বেধে গেছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত রোহান বলেন, ওরা কাল সকালের মধ্যে আমাকে মেস থেকে চলে যেতে থ্রেট দিয়ে গেছে, আমাকে পেলেই ওরা আবার মারবে। মার খেয়ে আমি সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতেও যেতে পারিনি তাদের কারণে। ওরাই বাইরের লোকজন এনে বাড়িওয়ালার সামনেই আমাকে মেরেছে তারপর নিজেরাই ঘটনা সাজিয়েছে। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং বিষয়টি বিভাগের সভাপতি ও প্রক্টর স্যারকে জানিয়েছি। উনারা ব্যবস্থা নিবেন বলেছেন।
বাড়িওয়ালা তৌহিদ ইকবাল খান জানান, আমার চোখে দুজনই সমানভাবে দোষ করেছে। ছোট্ট একটা মিলের বিষয় নিয়ে তারা হাতাহাতি থেকে মারামারি পর্যায়ে নিয়ে গেছে। বাড়িওয়ালা হিসেবে তাদের বিষয়টি সমাধান করতে গেলে ও দেখি বাইরে থেকে তাদের ডাকা কিছু ছেলে এসে বিশৃঙ্খলা করছে। ওরা চাইলেই সেখানে সমাধান করা যেত কিন্তু ওরা ছোট্ট সহজ একটা বিষয়কে অনেক বড় বানিয়ে ফেলেছে।



























