শনিবার, ০৯ আগস্ট ২০২৫

|২৪ শ্রাবণ ১৪৩২

সদ্য বিনোদন

প্রকাশিত: ১৩:৫৫, ১৩ জুলাই ২০২৫

মানুষকে এভাবে মারতে পারে!

মানুষকে এভাবে মারতে পারে!
ছবি: সংগৃহীত

‘সবাই চেয়ে দেখল, একটা মানুষকে কীভাবে মারতেছে। কেউ সাহায্য করেনি। এভাবে কি কেউ কাউকে মারতে পারে! সারাজীবন আমার চোখের জল ফেলতে হবে। সন্তানদের নিয়ে কীভাবে বাঁচব, ভাবতেই কষ্ট হয়।’ শোকাহত কণ্ঠে এসব কথা বলছিলেন নিহত লাল চাঁদ সোহাগের স্ত্রী লাকী বেগম, যখন তিনি স্বামীর কবরের পাশে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

সোহাগের দুই সন্তান, মেয়ে সোহানা (১৪) ও ছেলে সোহান (১১), নির্বাক হয়ে বাবার কবরের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। তারা বলেছিল, ‘আমরা এতিম হয়ে গেলাম। আমাদের বাবাকে পাথর মেরে হত্যা করা হয়েছে। বাবার হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

গত বুধবার (৯ জুলাই) রাজধানীর পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় শত শত মানুষের সামনেই ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ সোহাগকে নৃশংসভাবে পাথর মেরে হত্যা করা হয়। হত্যাকারীরা তার মরদেহের ওপর পৈশাচিক নৃত্য করেন, যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পুরো জাতিকে স্তব্ধ করে দেয়। এরপর হত্যাকারীদের কঠোর শাস্তির দাবিতে গণআন্দোলন শুরু হয়।

সোহাগকে শুক্রবার বরগুনা সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের ইসলামপুর গ্রামে নানাবাড়িতে দাফন করা হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ঢাকায় ভাঙারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং পাঁচ বছর ধরে নিজস্ব ব্যবসা পরিচালনা করছিলেন।

লাকী বেগম কালবেলাকে জানালেন, ‘মাহিনসহ আসামিরা মাসে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করতো। স্বামী যখন তা দিতে অস্বীকার করলো, তখন পরিকল্পিতভাবে তাকে ফোন দিয়ে দোকানে ডেকে নিয়ে প্রথমে মারধর করা হয়। পরে কাপড় ছিঁড়ে শুধু অন্তর্বাস পরিহিত অবস্থায় টেনে নিয়ে এসে রাস্তার ওপর পাথর দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।’

তিনি আরও অভিযোগ করেন, হত্যার পরও পুলিশ মামলা নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করেছে, এজাহারের দরখাস্ত বারবার পরিবর্তন করা হয়েছে এবং মরদেহ ময়নাতদন্তের পরও অনেক দেরিতে তাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

সোহাগের বোন ফাতেমা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমার ভাই ছিল আমার চোখের মনি। কখনো তাকে কষ্ট দিতে চাইনি। আগে মা চলে গিয়েছিলেন, এখন ভাইটাকেও হারালাম। ওদের কষ্ট দিয়ে মারা কোনো মানুষের কাজ নয়, তারা পশুর মতো।’

সোহাগের স্বজনদের কথায়, গ্রেপ্তার আসামি মাহমুদুল হাসান মাহিনের সঙ্গে সোহাগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। তারা একে অপরের বাসায় যাতায়াত করত এবং মাহিনের খরচও সোহাগ বহন করত।

বরগুনায় গতকাল দুপুর ১২টায় সোহাগকে নির্মম হত্যার প্রতিবাদে এবং দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবিতে বরগুনা সদর রোডে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বরগুনা প্রেস ক্লাব, মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন। সূত্র: কালবেলা