ব্রহ্মপুত্রে নৌকাডুবে দুই বোনের মৃত্যু, সাঁতরে বাঁচলেন বাবা-মা

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চরফরাদি ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদে নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ছোট বোন নীহা (৯)-এর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
শনিবার (১২ জুলাই) বেলা পৌনে ১২টার দিকে। এর আগেই শুক্রবার বিকেলে মারা যান বড় বোন নীলা (১৭)। হৃদয়বিদারক এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে পরিবারে, প্রতিবেশীদের মাঝেও নেমেছে শোকের মাতম।
নীলা ও নীহা কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার চৌদ্দশত ইউনিয়নের জালুয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা, ভাঙারি ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান ও তার স্ত্রী নীপা আক্তারের দুই মেয়ে। নীলা এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন, আর নীহা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তেন।
শুক্রবার বিকেলে আব্দুর রহমান তার স্ত্রী ও দুই কন্যাকে নিয়ে বেড়াতে যান চরফরাদি ইউনিয়নের দক্ষিণ চরটেকি এলাকায়। নৌভ্রমণের সময় হঠাৎ করে নৌকাটি ডুবে যায়। আব্দুর রহমান সাঁতরে বাঁচলেও, তার স্ত্রী নীপা ও বড় মেয়ে নীলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়, যেখানে চিকিৎসক নীলাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ছোট মেয়ে নীহাকে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত না পাওয়া গেলেও শনিবার নদীতে মরদেহ ভেসে উঠলে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল তাকে উদ্ধার করে।
মেয়েদের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন বাবা-মা। আব্দুর রহমান বলেন, ‘দুই মেয়ে সারাক্ষণ আনন্দে আমাদের সংসার ভরিয়ে রাখত। অনেক স্বপ্ন ছিল তাদের ঘিরে। এখন সব শেষ। আমাদের শূন্য করে দিয়ে চলে গেল তারা।’ মা নীপা আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।
পাকুন্দিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় গভীর দুঃখ প্রকাশ করছি। এলাকাবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত দক্ষিণ চরটেকি এলাকায় ভ্রমণ সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।’
এর আগেও ১ জুলাই একই নদীতে চরআলগি গ্রামের তিন শিশু নৌকাডুবিতে মারা যায়। মাত্র ১১ দিনের ব্যবধানে ঘটল আরও একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
চৌদ্দশত ইউপি চেয়ারম্যান আতাহার আলী বলেন, ‘নিলা ও নীহার মৃত্যুতে পুরো এলাকায় শোকের ছায়া। পরিবারটি সামাজিকভাবে খুব সাদামাটা, কিন্তু সুখী ছিল। আজ তারা সব হারাল।’