নারী শিক্ষার্থীকে নিয়ে ইবি শিক্ষকের কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, বহিষ্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
সাজিদ হত্যার বিচার দাবিতে আন্দোলনরত এক ছাত্রীকে নিয়ে অশালীন ও কুরুচিকর মন্তব্যের অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাছির উদ্দিন মিঝির বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে এই মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে শিক্ষার্থীরা। এসময় অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে বহিষ্কার, প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া সহ সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন তারা।
শিক্ষার্থীরা বলেন, 'একজন নারী শিক্ষার্থীর পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার অধিকার কারও নেই। তিনি যেমন নারী শিক্ষার্থীদের হেয় করছেন তেমনি শ্বাসরোধে হত্যা করা সাজিদ আব্দুল্লাহকেও চরমভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। একজন শিক্ষার্থী কোনো ভুল করা মাত্রই প্রশাসন শোকজ নোটিশ দেয়। কিন্তু, এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করার পরেও কেন শোকজ নোটিশ দেয়নি আমরা জানতে চাই। রক্তের উপর দাঁড়ানো প্রশাসন কেন এমন প্রহসনমূলক আচরণ করে আমরা জানতে চাই। আমরা অনতিবিলম্বে অভিযুক্ত শিক্ষকের বহিষ্কার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।'
এসময় তারা উপাচার্য বরাবর ৫ দফা দাবি দেন। দাবিগুলো হলো:
১. সাজিদ হত্যাকারীদের অতিদ্রুত গ্রেফতার, সাজিদকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং নারী শিক্ষার্থীদের পোশাক নিয়ে কটূক্তিকারী শিক্ষককে বহিষ্কার,
২. আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও তাদের হুমকি প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ,
৩. আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য প্রতিবাদ ও আন্দোলনে বাঁধা প্রদানকারীদের উদ্দেশ্য যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা গ্রহণ,
৪. ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের অধিকার ও আন্দোলনের সাংবিধানিক অধিকার সুরক্ষিত রাখা
৫. আন্দোলনকারীর একাডেমিক ফলাফলের উপর বিরূপ প্রভাব যেন না পড়ার নিশ্চয়তা প্রদান।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, 'শিক্ষার্থীরা লিখিত দাবি জানিয়েছে। ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগপত্র দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। সাজিদের বিষয়ে সিআইডিকে যেকোনো ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পূর্ণ-স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে। যদি মানহানিকর মন্তব্য করে থাকে তবে তা শিক্ষকদের জন্য অনুচিত। শুনেছি ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট শিক্ষক দুঃখ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমিও দুঃখ প্রকাশ করছি।'
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উক্ত অডিও ভাইরাল হয়। চার মিনিট ছয় সেকেন্ডের ওই অডিওতে আল-কুরআন বিভাগের আন্দোলন, শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ও এক নারী শিক্ষার্থীকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য এবং জুলাই বিল্পবের অন্যতম যোদ্ধা নিহত সাজিদ আব্দুল্লাহকে নিয়েও বিতর্কিত মন্তব্য করতে শোনা যায়।
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত শিক্ষক বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকাল দশটার দিকে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি তার বক্তব্যকে 'স্লিপ অব টাং' উল্লেখ করে মানবিক দুর্বলতা মনে করে সকলের কাছে নিঃশর্ত দুঃখ প্রকাশ করেন।
এস.এম. শাহরীয়ার স্বাধীন/এমটি



























