ফেসবুকে মরদেহবাহী স্পিডবোট চালুর সংবাদ দেওয়া প্রবাসীই হলেন প্রথম যাত্রী
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে সদ্য চালু হওয়া লাশবাহী স্পিডবোটের খবরটি নিজের ফেসবুকে শেয়ার করে স্বস্তি প্রকাশ করেছিলেন প্রবাসী মোহাম্মদ আমীন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস মাত্র দশ দিন পর সেই স্পিডবোটেই নিজেই ফিরলেন তিনি লাশ হয়ে। শনিবার (১৮ অক্টোবর) তাঁর মরদেহ বহনের মধ্য দিয়েই সন্দ্বীপে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় নতুন চালু হওয়া লাশবাহী স্পিডবোটের।
গত ৮ অক্টোবর ওমানের ধুকুম প্রদেশের সিদরা এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় সন্দ্বীপের সাত প্রবাসী প্রাণ হারান। তাঁদের মধ্যে মোহাম্মদ আমীন ছিলেন সারিকাইত ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের আলী কব্বরের ছেলে। ঘরে রয়েছে দুই মেয়ে ও এক ছেলে। পরিবারের সদস্যদের ভাষায়, মৃত্যুর এক দিন আগে ফেসবুকে তিনি লিখেছিলেন, ‘সন্দ্বীপে লাশবাহী স্পিডবোট চালু হচ্ছে, এতে স্বস্তি লাগছে।’ কিন্তু নিয়তির নির্মম পরিহাসে সেই নৌযানেই ফিরতে হলো তাঁকে।
শনিবার রাতে নিহত সাত প্রবাসীর মরদেহ সন্দ্বীপে পৌঁছায়। পরদিন রোববার সকালে জানাজা শেষে তাঁদের নিজ নিজ গ্রামে দাফন করা হয়। দুর্ঘটনায় নিহত অন্য প্রবাসীরা হলেন-মো. সাহাবুদ্দিন (২৮), মো. বাবলু (২৮), মো. রকি (২৭), মো. আরজু (২৬), মো. জুয়েল (২৮) ও মোশারফ হোসেন (২৬)। তাঁরা সবাই ওমানের সাগরে মাছ ধরার কাজ করতেন।
নিহত সাহাবুদ্দিনের পরিবারে রয়েছেন মা-বাবা, স্ত্রী ও মাত্র চার মাসের এক শিশু। পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্নে বিদেশে পাড়ি জমালেও সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। মৃত্যুর কিছুদিন আগে নিজের ফেসবুকে তিনি লিখেছিলেন, ‘মধ্যবিত্ত মানে হাজারটা স্বপ্ন, কিন্তু দিন শেষে ভাগ্যের খাতাটা শূন্য।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দুর্ঘটনায় নিহত সাত প্রবাসীর মধ্যে ছয়জনই আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। তাঁদের ভাঙাচোরা টিনের ঘরই একমাত্র আশ্রয়। এর মধ্যে পাঁচজনের সন্তান মাত্র চার থেকে ছয় মাস বয়সী। অকাল মৃত্যুতে একসঙ্গে নিভে গেছে সাতটি স্বপ্ন, শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে সন্দ্বীপের গ্রামগুলো।



























