‘বড় বউ, ছোট গিন্নি, শ্যালিকা’ নামে ছাত্রীদের সম্বোধন, শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি অভিযোগ

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার বাইটকামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক মো. আব্দুল আউয়াল মণ্ডলের বিরুদ্ধে একাধিক অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের প্রতি অশোভন আচরণ ও যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, শিক্ষকের অপ্রত্যাশিত আচরণ, শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুচিত ও বিব্রতকর সম্বোধন, শিক্ষাব্যবস্থায় গাফিলতি এবং এমন কিছু ঘটনার বর্ণনা যা স্কুলের নিরাপত্তা ও শিক্ষার আদর্শকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। গত ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির গণিত ক্লাস চলাকালীন সময়ে শিক্ষক আউয়াল মন্ডল কয়েকজন ছাত্রীকে উদ্দেশ্য করে অনুপযুক্ত ও অস্বস্তিকর মন্তব্য করেন। শিক্ষার্থীদের ‘বড় বউ’, ‘ছোট গিন্নি’, ‘শ্যালিকা’ ইত্যাদি নামে ডাকা হয়; বিয়েসংক্রান্ত অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেন। শিক্ষার্থীরা এতে বিব্রত হয় এবং অভিভাবকরা বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানান।
অভিযোগকারী অভিভাবক মো. শহিদুল ইসলাম তাঁর কন্যার পক্ষ থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে ২১ সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে-নির্ধারিত সময়ে না আসা, ক্লাস চলাকালীন মোবাইল দিয়ে ভিডিয়ো/গান দেখা, মাঝে মাঝে ঘুমিয়ে পড়া এবং একদিকে পড়ানোর নাম করে অন্য কাজ করা। এসব অভিভাবকদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো অঙ্ক বুঝে না, সাহায্য চাইলে তিনি ধমক দেন-এই অভিযোগও পুনরাবৃত্তি আছে।
অনুসন্ধান ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে যখন আউয়াল মন্ডল খন্জনমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মরত ছিলেন, তখনও তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছিল। প্রাইভেট পড়ুয়া একাধিক কিশোরীর সামাজিকভাবে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলা, নারী শিক্ষার্থীর নাম দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইক অ্যাকাউন্ট খুলে অশালীন কনটেন্টের প্রকাশ করে নিজেই সেগুলোর স্ক্রিন শর্ট দিয়ে ভুক্তভোগী সেই ছাত্রীকে দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা, তাদের ওপর মানসিক চাপ সৃষ্টি করা ইত্যাদি।
স্থানীয় সালিশ বৈঠকে সেই অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তখন তিনি ১০০ টাকার স্ট্যাম্পে স্বীকারোক্তি দেন। পরবর্তীতে তাকে বদলি করা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগের ঐ দলিল আজও রয়ে গেছে এবং প্রতিবেদকের কাছে সেটির কপি আছে। স্থানীয় সূত্র বলছে, অতীতের উপশম ‘বদলি’ই শাস্তি হিসেবে প্রযোজ্য করা হয়েছে। কিন্তু দৃষ্টান্তমূলক কোনো শাস্তি না থাকায় একই আচরণ আরও লোকচক্ষুর নিচে ফিরে এসেছে। একই সূত্রে জানা যায় তিনি নানা সময়ে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে মোট প্রায় ৫/৬ বার ‘পানিশমেন্ট বদলি’ হয়েছেন।
অভিভাবকদের অভিযোগ, ক্লাসরুম এখন শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ জায়গা নয়। ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ক্লাস করছে। অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষকের কাছেই যদি সন্তানরা নিরাপত্তাহীনতা বোধ করে, তাহলে স্কুলে পাঠাবো কীভাবে?
এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী জানান, শিক্ষক আউয়াল মন্ডল তাকে রাস্তা ঘাটে উত্ত্যক্ত করেছেন। এমনকি বলেছেন, তোর আমলনামা আমার কাছে আছে, বিয়ের পর স্বামীকে সব বলে দিব। এতে ওই শিক্ষার্থী ও পরিবার আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, এক প্রাক্তন শিক্ষার্থীকে চলার পথে ডেকে ডেকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগও রয়েছে। রাস্তা ঘাটে দেখা হলে তাকে উদ্দেশ্য করে অভিযুক্ত শিক্ষক বলেন-‘তোর আমলনামা আমার কাছে আছে’, তোর বিয়ের পর তোর স্বামী কে সব বলে দিব।
ভুক্তভোগী সেই কিশোরী তার পরিবারের সাথে কথা হয়েছে এই প্রতিবেদকের। তারা প্রতিবেদক কে জানিয়েছেন যে, তারা আতঙ্কপ্রবণ, কেউ মুখ খুলতে ভয় পান। ভুক্তভোগী সেই কিশোরীর মায়ের কণ্ঠে সেই একই প্রত্যাশা। আমাদের সন্তান যেন রাস্তাঘাটে দ্বিধাহীন হয়ে যেতে পারে।
ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক আতিকুর রহমান জানান, আমার কাছে বিষয়টি কেউ বলেনি। আমি ফেসবুকে দেখেছি। তবে বিষয়টি জানার পর অভিযুক্ত শিক্ষককে আমি আর ক্লাস নিতে দেই না।
অভিযুক্ত শিক্ষককে একাধিক বার ফোনে চেষ্টা করলে পাওয়া যায়নি। এ কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল কুমার হালদার জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তের পরে জানা যাবে আসল ঘটনা কী।