চবি শিক্ষার্থী মামুনের মাথার খুলি রাখা হয়েছে ফ্রিজে, জ্ঞান ফেরেনি সায়েমের

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের ছাত্র মামুন মিয়া এখন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। রামদার কোপে তার মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে। এতটাই গভীর ক্ষত হয়েছে যে খুলির একাংশ অপসারণ করতে হয়েছে। ভাঙা হাড় ফ্রিজে সংরক্ষণ করে মাথায় সাদা ব্যান্ডেজে মোড়ানো হয়েছে, যেখানে কালো কালিতে লেখা ‘হাড় নেই, চাপ দেবেন না।’
মামুনের বড় ভাই মাসুদ রানা, যিনি টাঙ্গাইলের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ভাইয়ের শয্যার পাশে বসে অশ্রুসিক্ত কণ্ঠে বলেন, ‘মামুন এখন কথা বলতে পারছে, কেবিনে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সে কি আর আগের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে? আমরা যে স্বপ্ন নিয়ে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠালাম, সেটা যেন ভেঙে যাচ্ছে। ডাক্তার বলেছেন, সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে, আর হলেও কঠোর নিয়ম মেনে চলতে হবে’।
একইভাবে হাসপাতালের শয্যায় নিথর পড়ে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক ছাত্র ইমতিয়াজ আহমেদ সায়েম। অর্থনীতি বিভাগের মাস্টার্সের এই শিক্ষার্থী রোববার শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসীর সংঘর্ষে মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর আহত হন। জরুরি অস্ত্রোপচারের পর চার দিন কেটে গেলেও তার জ্ঞান ফেরেনি। বর্তমানে তিনি নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালের আইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে আছেন।
সায়েমের বাবা মোহাম্মদ আমির হোসেন ছেলের খবর পেয়ে বগুড়া থেকে ছুটে এসেছেন চট্টগ্রামে। হাসপাতালের করিডোরে রাত কাটাচ্ছেন তিনি। চোখের পানি মুছতে মুছতে বলেন, ‘ছেলেকে অনেকবার বলেছি, মারামারিতে যাস না। সে বলেছিল, আহত বন্ধুদের হাসপাতালে নিতে যাচ্ছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই শুনলাম, তাকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করেছে সন্ত্রাসীরা। একজন মানুষ কীভাবে আরেকজনকে এতটা নির্মমভাবে আঘাত করতে পারে?’
পার্কভিউ হাসপাতালের স্পেশালাইজড ইউনিটের ইনচার্জ ডা. সিরাজুল মোস্তফা জানান, সায়েমের মাথার খুলির ভেতরের অংশ ও রক্তনালী ছিঁড়ে গেছে। এখনও তার জ্ঞান ফেরেনি, যদিও রক্তচাপে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। তিনি বলেন, ‘তার অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক।’ মামুনের বিষয়ে তিনি জানান, অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। দুই থেকে আড়াই মাস পর ফ্রিজে রাখা খুলি পুনঃস্থাপন করা যেতে পারে, তবে পুরোপুরি সুস্থ হতে দীর্ঘ সময় লাগবে।
উল্লেখ্য, শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট এলাকায় দারোয়ানের এক ছাত্রীকে হেনস্তার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দ্রুত গ্রামবাসীর সঙ্গে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ প্রায় ৪০০ জন আহত হন। এ ঘটনায় এখনও অন্তত তিন শিক্ষার্থী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন।