বনানীতে মাদক ব্যাবসার মূল হোতা সোর্স শহীদ এখনও অধরা!
রাজধানীর বনানীতে মাদক ব্যাবসার প্রধান হোতা শহিদুল ইসলাম শহীদ ওরফে সোর্স শহীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী। বনানী ২ নম্বর রোড, কড়াইল বস্তি, বেদে বস্তি, গোডাউন বস্তি, এরশাদ নগর, বেলতলা সহ বিভিন্ন এলাকায় মাদকের স্বর্গ রাজ্যে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বনানীর টিএন্ডটি মাঠের পাশে গোডাউন বস্তিতে থেকে সোর্স শহীদ প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে মাদকের রমরমা বাণিজ্য পরিচালনা করছে। পুলিশের সোর্স হিসেবে বনানী থানার একাধিক এসআইয়ের সাথে তাকে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। রহস্যজনক কারণে পুলিশ তার অপকর্ম জেনেও নীরব ভূমিকা পালন করছে। এমন কী পুলিশের বিশেষ অভিযানেও গাড়িবহরে সোর্স হিসেবে তাকে দেখা যায়।
তথ্য মতে, শহিদুল ইসলাম শহীদ ওরফে সোর্স শহীদ বনানী থানা যুবলীগ নেতা। শহীদের নিজের ফেসবুক আইডিতে আপলোড করা ছবির অ্যালবামে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত যুবলীগের সভা, সমাবেশ, মিটিং মিছিলে তার সক্রিয় অংশগ্রহণের ছবি খুঁজে পাওয়া যায়। একসময়ে পরিচিতির জন্য যুবলীগের নামে নিজের ছবি সম্বলিত পোস্টারও ছাপিয়ে এলাকার দেয়ালে দেয়ালে সাটিয়েছিলেন। সেই পোস্টারের ছবি তার ফেসবুক আইডির অ্যালবামেই নজরে পড়ে।
একাধিক বিএনপি নেতা বলেন, 'শহীদ আওয়ামী লীগের লোক হয়ে কীভাবে এখনো পুলিশ তাকে নিয়ে গাড়িতে করে ঘুরে বেড়ায় আমাদের বোধগম্য হয় না। প্রশাসনিক অনেক গোপনীয় তথ্যও সহজেই পাচার হয়ে যায় এটা বুঝার আর বাকি থাকে না।'
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালে সোর্স শহীদ শত শত বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছে এবং গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করেছে। জুলাইয়ের ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগের হয়ে মাঠে থেকে ছাত্র জনতার উপর হামলা চালিয়েছে, গ্রেফতার করিয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের সব থানা পুলিশের ন্যায় বনানী থানা পুলিশে ব্যাপক রদবদল হয়েছে। বদলি হয়ে আসা পুলিশরা জানে না শহীদের অতীতের ইতিহাস। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে পুলিশের সোর্স হিসেবে বহাল তবিয়তে কাজ করে যাচ্ছে শহীদ।
অভিযোগ আছে, বর্তমানে আত্মগোপনে থাকা বনানীর আওয়ামী ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের পুলিশি অভিযানের তথ্য আগাম জানিয়ে দিয়ে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করছে সোর্স শহীদ। যে কারণে বনানী এলাকায় এখনো চাঁদাবাজি, মাদক ব্যাবসা ও বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ হচ্ছে না। এছাড়া সোর্স শহীদ বনানীতে চাঁদাবাজি, মাদক ব্যাবসা সহ চোরদের এক ভয়াবহ সিন্ডিকেট নিজেই পরিচালনা করছে।
গোপন অনুসন্ধানে টঙ্গীতে সোর্স শহীদের একটি বিলাসবহুল ভবনের সন্ধান পাওয়া যায়। কিন্তু সেই বাড়িতে না থেকে কৌশলগত কারণে বস্তিতে থেকে অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। টঙ্গীর বাড়িটি ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। বনানীর গোডাউন বস্তিতে দুটি ঘর তুলে পরিবার নিয়ে থাকলেও তার দখলে রয়েছে আরও অন্তত ১০টি ঘর।
বনানী থানা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান বলেন, 'শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার আগে অনেকেই আওয়ামী লীগ করতো। বনানীতে কারা ৫ তারিখের পর থেকে নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করছে আমরা সবই জানি। আমরা অনেককেই ক্ষমা করে দিয়েছি। কেউ মাদক ব্যাবসা করলে সেটা দেখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।'
অন্যদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বনানী থানা বিএনপি'র কয়েকজন কর্মী জানান, তাদের সংগঠনের কিছু নেতা টাকার বিনিময়ে আওয়ামী লীগের দোসরদের পুনর্বাসন করছেন।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল সারোয়ার বলেন, 'বনানী থানায় কোনো সোর্স নেই। মাদক ব্যাবসা বা অন্য কোনো অপরাধের সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।'
সদ্য সংবাদ/এমটি



























