জবি শিক্ষার্থী জুবায়েদ হত্যার নেপথ্যে ‘প্রেমের সম্পর্ক’, আটক ৩

পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল নেতা মো. জুবায়েদ হোসেন হত্যা মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার (২০ অক্টোবর) সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশ জানায়, প্রেমঘটিত সম্পর্কের জেরেই এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
ডিএমপির লালবাগ বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. আমিনুল কবীর তরফদার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘সিসিটিভিতে শনাক্ত তিনজনকে আটক করা হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাঁরা আটক ওই ছাত্রীর বন্ধু।’
হত্যার কারণ সম্পর্কে ডিএমপির লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী বলেন, ‘হত্যার পেছনে প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি স্পষ্ট। তবে পরিকল্পনা ও ঘটনার বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে। সব দিকই খতিয়ে দেখা হবে।’ তিনি জানান, মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হবে।
সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, পাঁচতলা ভবনের সিঁড়িজুড়ে রক্তের দাগ ছড়িয়ে রয়েছে। ভবনের সর্বোচ্চ তলায় টিউশন করতেন জুবায়েদ।
ভবনের নিচতলায় থাকা এক নারী, যিনি নিজেকে আটক ছাত্রীর নানি হিসেবে পরিচয় দেন, বলেন, ‘রোববার বিকেল চারটার দিকে নামাজের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। হঠাৎ বাইরে চিৎকার শুনে নামাজ শেষে বের হই। দেখি, ভিড় জমেছে একজনের লাশ পড়ে আছে। পরে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।’ তিনি আরও জানান, ‘এই ভবনটি নতুন নির্মিত। আগে পেছনের পুরোনো ঘরে ওই ছাত্রী ও তার বন্ধুরা ভাড়া থাকত। প্রায় দুই বছর আগে তারা চলে যায়।’
মিটফোর্ড হাসপাতালের মর্গে সোমবার সকালে জুবায়েদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়, তাঁর গলার ডান পাশে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ও দুই হাতে আঁচড়ের চিহ্ন ছিল।
হাসপাতালের সামনে জুবায়েদের বাবা মোবারক হোসেন বলেন, ‘আমি ব্যবসার কারণে কুমিল্লায় থাকি। ছেলে বলেছিল, ‘‘আর ছয় মাস পড়াশোনা শেষ হলেই চাকরি নেবে। তখন তোমাকে কষ্ট করতে হবে না।’’ আমার সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। আমি সন্তানের হত্যার বিচার ও ক্ষতিপূরণ চাই।’
দুপুরে মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তরের পর বেলা দুইটায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে কুমিল্লার হোমনা উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে দ্বিতীয় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে, ঘটনার এক দিন পার হলেও এখনো থানায় মামলা হয়নি। জুবায়েদের পরিবার জানায়, তারা রোববার রাত থেকেই মামলা করার চেষ্টা করছে, কিন্তু এখনো তা করতে পারেনি।
জুবায়েদের বড় ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত বলেন, ‘আমরা ছাত্রীসহ তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মামলা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ বলেছে, এতজনের নাম না দিতে।’
মামলা না নেওয়ার বিষয়ে লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী বলেন, ‘তাঁরা ভবনের সবার নামে মামলা দিতে চেয়েছেন। আমরা বলেছি, যাঁরা সরাসরি ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধেই মামলা করতে। মামলা নিতে আমরা প্রস্তুত।’
গত রোববার রাতে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার একটি ভবনের সিঁড়ি থেকে জুবায়েদের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী জুবায়েদ ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।
সহপাঠী ও পুলিশের তথ্যমতে, ভবনটির একটি ফ্ল্যাটে উচ্চমাধ্যমিকের এক ছাত্রীকে প্রাইভেট পড়াতেন জুবায়েদ। তাঁর মরদেহ উদ্ধারের পর ওই ছাত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বংশাল থানায় নেওয়া হয়।