মেট্রোরেলে নামেই বিশেষ অগ্রাধিকার, ভিড়ের চাপে বঞ্চিত প্রবীণ-প্রতিবন্ধীরা

মেট্রোরেলে কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার জন্য নগরবাসীর আস্থার বাহন। ছুটির দিনে পরিবার অথবা প্রিয়জনদের নিয়ে ঘরতে যেতে কিংবা অফিস যাত্রায় যানজটের ঝক্কি-ঝামেলা এড়াতে সবাই অগ্রাধিকার দেন উড়াল সড়কের মেট্রোরেলে। তবে এই সময়ে মেট্রোতে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন কিংবা বয়োজ্যেষ্ঠ যাত্রীদের মেট্রো ভ্রমণ অনেকটাই দুরূহ বিষয়। কারণ বরাদ্দকৃত অগ্রাধিকার আসন থাকলেও তা থাকে সুস্থ-স্বাভাবিক মানুষদের দখলেই।
প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে ৩ লাখ যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দেয় মেট্রোরেল। ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড বা ডিএমটিসিএল এর পরিচালনায় এই বাহনটি যানজটের শহরে নগরবাসীর অন্যতম অনুষঙ্গ। তবে এর জনপ্রিয়তা যতটা বেড়েছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বাড়তি ভিড়। ভিড় হলেও ঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে সে ভিড় উপেক্ষা করে গাদাগাদি করে মেটাতে চড়েন নগরবাসী। আসনে যে পরিমাণ যাত্রী বসতে পারেন তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি সফর করেন দাঁড়িয়ে। তবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের সেই ভিড় ঠেলে প্রবেশ কিংবা দাঁড়িয়ে যাত্রার সুযোগ আসলে কতটা।
মেট্রোর ভিতরে দেখা গেছে যাত্রীদের ভিড়ের মধ্যে একই সাথে দাঁড়িয়ে আছেন প্রবীণ এবং ছোট্ট শিশু কোলে নিয়ে অভিভাবকরা। অথচ তাদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া আছে অগ্রাধিকার আসন! তবে আসন থাকলেও সেখানে বসে আছেন অন্য কেউ। তাই এই শিশুদের কোলে নিয়ে অভিভাবকরা কিংবা বয়সে প্রবীণরা কষ্ট হলেও অনেকটা অপারগ হয়েই দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন নিজ নিজ গন্তব্যে।
নারীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া ১টি কোচ বাদে বাকি ৫টি কোচে মোট ৬০টি আসন বরাদ্দ থাকলেও তা পেতে অনেক ক্ষেত্রেই পড়তে অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে, জড়াতে হয় বাগ্বিতণ্ডায়। আবার অনেকে এমন পরিস্থিতি হতে পারে ভেবেই তার আসন পাবার অধিকার সম্পর্কে অন্যদের সাথে কথা বলতে চান না।
তবে যারা সামনে বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও তাদের আসন দখল করে বসে থাকেন তারা কি জানেন না যে এই আসনগুলো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য, নাকি জেনেও বসে থাকেন?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাচ্চা কোলে নিয়ে দাড়িয়ে থাকা একজন যাত্রী বলেন, ‘আমি ট্রেনে ওঠার পরে সিট না পাওয়ায় দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে। আগে যারা উঠছে তারা বসে গেছে, তাদের সিট ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা যায় না, দেখা যাবে অনেকে রাগ কিংবা আমার উপর ক্ষিপ্ত হবে।’
অন্য এক যাত্রী বলেন, ‘কেউ যদি এসে বলে তাহলে আমরা ছেড়ে দেই। অনেক সময় বয়স্ক হলে নিজের থেকেই সিট ছেড়ে দাঁড়িয়ে যাই। এগুলো সচেতনতার বিষয় এবং সরকারিভাবে এই বিষয়ে প্রচার প্রচারণা বাড়ানো উচিত।’
এমন পরিস্থিতিতে যেখানে আরোও বেশি সচেতনতামূলক সাইনেজ লাগানে উচিত সেখানে ট্রেনের কোচ জুড়ে বিজ্ঞাপনে ভরা। তবে এই পরিস্থিতি এড়াতে মাঝে মাঝে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন ডিএমটিসিএল এর স্টেশন কন্ট্রোলার তানভীর আহমেদ। তিনি বলেন, ‘ আমাদের মেট্রোরেলের পক্ষ থেকে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ও বয়োজ্যেষ্ঠদের জন্য এবং শিশুদের কোলে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাদের জন্য আমাদের ট্রেনের অপারেটরের দায়িত্বপ্রাপ্তরা সিসিটিভি মনিটরিং এর মাধ্যমে সিট গুলো ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। এছাড়াও আমাদের সাধারণ যাত্রীদের প্রতি অনুরোধ থাকবে নিজের বিবেক থেকে তারা যেন পেগনেন্ট মহিলা কিংবা শিশুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাকে যেন এই সিটগুলো ছেড়ে দেয়।’