বিএনপি নেতা ও প্রকৌশলী মিলেমিশে দখল বাণিজ্যে

রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র রমনা পার্কের অভ্যন্তরে অবস্থিত ঐতিহ্যবাহী চাইনিজ রেস্তোরাটি বেদখল হয়ে গেছে। গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পরপরই বিএনপির পরিচয় ব্যবহার করে এক ব্যক্তি রেস্তোরাঁটি দখল করে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আর এ কাজে সহযোগিতা করেছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের এক নির্বাহী প্রকৌশলী- এমনই অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সূত্র থেকে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের নথি অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে ‘ইউরো এশিয়ানো’ নামের প্রতিষ্ঠান ৩ কোটি ৩ লাখ টাকায় পাঁচ বছরের জন্য রমনা রেস্তোরাঁর ইজারা নেয়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ছিলেন নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা জিল্লুর রহমান, যিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ইজারা চুক্তি অনুযায়ী, নিয়মিত সরকারি রাজস্ব জমা দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি রেস্তোরাঁ পরিচালনা করছিল।
কিন্তু ২০২৪ সালের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কথিত বিএনপি নেতা মোল্লা ইউসুফ রেস্তোরাঁটি দখল করে নেন। নিজেকে তিনি কোতোয়ালি থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হিসেবে পরিচয় দিলেও, দলীয় সূত্রে জানা গেছে তিনি বিএনপির কোনো আনুষ্ঠানিক পদে নেই। অন্যদিকে বৈধ ইজারাদার জিল্লুর রহমান তখন কার্যত অদৃশ্য হয়ে যান।
অভিযোগের বিষয়ে মোল্লা ইউসূফ জানান, তিনিই এই রেস্টুরেন্টটির সবকিছু। তবে কিভাবে তিনি মালিক হলেও সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
বর্তমানে রেস্তোরাঁয় প্রায় ৩৫ জন কর্মচারী কাজ করছেন এবং প্রতিদিন শত শত মানুষ রমনা পার্কে ঘুরতে এসে রেস্তোরাঁয় খাবার গ্রহণ করছেন। শুধু তাই নয়, পার্কের লেকে থাকা প্যাডেল বোট থেকেও অর্থ আদায় করা হচ্ছে। প্রতি আধা ঘণ্টার জন্য ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হয়।
এভাবে এক বছরের বেশি সময় ধরে ব্যবসা চালিয়ে গেলেও সরকারি কোষাগারে একটি টাকাও জমা দেওয়া হয়নি। গণপূর্ত অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, শুধু ইজারামূল্য বাবদ সরকার ইতোমধ্যেই প্রায় ৫০ লাখ টাকা লোকসান গুনেছে।
স্থানীয় সূত্র দাবি করছে, এই অবৈধ দখলদারিত্ব টিকিয়ে রাখতে সহযোগিতা করছেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। অভিযোগ রয়েছে, তিনি মোল্লা ইউসুফের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে দখলদার ব্যবসার সবকিছু দেখেও ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। বরং প্রাপ্ত মুনাফার একটি অংশ তিনি নিজেও পাচ্ছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আবুল কালাম আজাদ বলেছেন- ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সত্য নয়। পূর্বের লিজগ্রহীতা সরকারি জমা প্রদান করতে ব্যর্থ হওয়ায় চুক্তি বাতিল করার জন্য চিঠি দেয়া এবং নতুন দরপত্র আহ্বান করার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এছাড়া উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট চেয়ে মন্ত্রণালয় ও ডিসি অফিসে চিঠি দেওয়া হয়েছে।’
তবে কবে এসব চিঠি পাঠানো হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি কোনো তথ্য দেননি।
এদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল- বিএনপি’র ঢাকা দক্ষিণের আওতাধীন কোতয়ালী থানা সভাপতি হাজী নাজিম জানান, মোল্লা ইউসুফ বিএনপির কোনো পদে নেই। রেস্তোরাঁ দখলের বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর খোঁজ নিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত হয়েছি। সূত্র: বাংলা অ্যাফেয়ার্স