রোববার, ১০ আগস্ট ২০২৫

|২৫ শ্রাবণ ১৪৩২

সদ্য সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ৭ জুলাই ২০২৫

বর্ষার পানিতে বাজার মাতাল দেশি মাছ, দামও বেশি, চাহিদা বেশি

বর্ষার পানিতে বাজার মাতাল দেশি মাছ, দামও বেশি, চাহিদা বেশি

বর্ষা এলেই নতুন পানিতে ভরে ওঠে নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়। এতে প্রাণ ফিরে পায় দেশের মুক্ত জলাশয়গুলো, দেখা মেলে দেশি নানা প্রজাতির মাছের। দারকিনা, পুঁটি, মলা, ঢেলা, চেলা, চান্দা, খলসে, গজার, বোয়াল, চিতল, বাগাড়, আইড়সহ বিভিন্ন মাছ এখন গ্রামগঞ্জ পেরিয়ে আসছে রাজধানীসহ বড় শহরের বাজারে।

ঢাকার কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল, মিরপুর-৬ ও মিরপুর-২ নম্বরের বড়বাগ বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এসব দেশি মাছের সরব উপস্থিতি। মিরপুর-৬ নম্বর কাঁচাবাজারে হরিদাস রাজবংশীর দোকানে পাওয়া যাচ্ছে পুঁটি, বোয়াল ও ট্যাংরা। পুঁটি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি এক হাজার টাকায়। আধা কেজি পুঁটি দরকষাকষি করে ৪০০ টাকায় কিনলেন ব্যবসায়ী মো. শাহীন। তিনি আরও কেনেন ৬০০ টাকায় ট্যাংরা এবং ১ হাজার টাকায় এক কেজির বোয়াল। হরিদাস একটি সাত কেজি ওজনের বাগাড়ের দাম চাইছিলেন সাত হাজার টাকা। মাছের আকার বড় হলে স্বাদেও ভিন্নতা আসে বলে মনে করেন ক্রেতারা।

পাশাপাশি, বেসরকারি চাকরিজীবী মো. টিটু একই বাজার থেকে এক কেজি বেলে মাছ ১ হাজার ৩০০ টাকায় কিনেছেন। পাশাপাশি ৩০০ গ্রাম চিংড়ি এক হাজার টাকা কেজি দরে এবং ৭০০ গ্রামের একটি ইলিশ ২ হাজার ৩০০ টাকায় কিনেছেন তিনি। তাঁর মতে, দাম বেশি হলেও দেশি মাছের স্বাদ ও চাহিদা বেশি বলেই কিনতে হয়।

বড় মাছের ক্ষেত্রেও নজর কাড়ার মতো বৈচিত্র্য ছিল বাজারে। কারওয়ান বাজারের বাচ্চু মিয়ার দোকানে দেখা গেল ১২ কেজি ওজনের একটি রুই মাছ, যার দাম হাঁকা হচ্ছিল ১৯ হাজার ২০০ টাকা (প্রতি কেজি ১,৬০০ টাকা)। তাঁর দোকানে ছিল চার কেজির চিতল (৪ হাজার টাকা) ও ছয় কেজির আইড় মাছ, যার দাম ৭ হাজার ২০০ টাকা। তিনি বলেন, এসব মাছ নদী থেকে আনা হয়, সব সময় পাওয়া যায় না বলেই দাম বেশি।

ঢাকার চারটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মুক্ত জলাশয়ের মাছের দাম আকার ও বাজারভেদে বেশ ওঠানামা করছে। প্রতি কেজি পুঁটি ৬০০–১,০০০ টাকা, ট্যাংরা ৬০০–১,২০০, বেলে ৫০০–১,৩০০, বাইন ৮০০–১,২০০, চিংড়ি ১,০০০–১,৪০০, মলা ও পিয়ালি ৬০০–৭০০, গুলশা ৭০০–১,২০০, বাতাসি ১,২০০, কাচকি ৮০০, শোল ১,০০০, মাগুর ৫০০–৬০০, শিং ৪০০–৫০০, পাবদা ৪০০, বাগাড় ১,০০০, আইড় ১,১০০–১,২০০, বোয়াল ৭০০–১,২০০ এবং বড় রুই ১,৬০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

মৎস্য অধিদপ্তর বলছে, দেশের মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ৫৯ শতাংশ চাষকৃত হলেও মুক্ত জলাশয়ের মাছের অবদান মাত্র ১৫–১৭ শতাংশ। এই মাছের স্বাদ ও পুষ্টিমান বেশি হওয়ায় এর চাহিদাও বেশি। সরবরাহ তুলনায় কম থাকায় দাম বেশি হওয়া স্বাভাবিক।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মো. আবদুল ওহাব বলেন, বর্ষা শুরুর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে খাল-বিল-নদীতে দেখা যায় ছোট মাছের আধিক্য। নতুন পানির সংযোগে মাছ ছড়িয়ে পড়ে এবং ডিম পাড়ে, যার ফলে প্রাকৃতিকভাবেই মাছের উৎপাদন বাড়ে।

সরকারও মুক্ত জলাশয়ের মাছ উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে। বর্তমানে দেশে ৬৪৯টি অভয়াশ্রম রয়েছে, যেখানে সারা বছর মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এসব জায়গায় মাছ বংশবিস্তার করে আশপাশে ছড়িয়ে পড়ে। পাশাপাশি ‘বিল নার্সারি’ প্রকল্পে গভীর পানির অংশে রেণুপোনা ছেড়ে তা লালন-পালন করে খাল-বিলে ছাড়ার ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে। হাওর অঞ্চলের বিলগুলোতেও শতকরা ১০ ভাগ এলাকাকে ইজারামুক্ত রাখার পরিকল্পনা করছে সরকার, যাতে সব মাছ একবারে ধরে ফেলা না হয়। সূত্র: প্রথম আলো
 

সম্পর্কিত বিষয়: