বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫

|১৪ আশ্বিন ১৪৩২

সদ্য সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:৩৮, ৫ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ১৭:৪৩, ৫ জুলাই ২০২৫

মেহনত করা ইসলামের চোখে সম্মানের

মেহনত করা ইসলামের চোখে সম্মানের

ইসলাম মানবজাতিকে দিয়েছে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা, জাগিয়ে তুলেছে আত্মসম্মান ও আত্মনির্ভরতার চেতনা। ইসলাম চায়, প্রতিটি মানুষ সম্মানজনক জীবন যাপন করুক, হালাল পথে পরিশ্রম করে উপার্জন করুক এবং তাতেই গর্ববোধ করুক।

মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) ছিলেন কর্মমুখী জীবনের প্রকৃত উদাহরণ। তিনি কখনো ব্যবসা করেছেন, কখনো গবাদিপশু চরিয়েছেন। তাঁর জীবন ও সাহাবায়ে কেরামের প্রতি তাঁর নির্দেশনা যুগে যুগে পরিশ্রমী মুসলিম সমাজের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে আছে।

একবার এক আনসারি সাহাবি সাহায্যের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এলে তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তার ঘরে কিছু আছে কি না। সাহাবি জানান, একটি কম্বল আছে, যার অর্ধেক দিয়ে তিনি শরীর ঢাকেন এবং বাকি অংশ বিছানার কাজে লাগান, আর আছে একটি পেয়ালা। রাসুল (সা.) এই দুটি জিনিস নিয়ে আসতে বলেন এবং নিজ হাতে সেগুলো বিক্রির আহ্বান জানান। একজন এক দিরহাম দিতে চাইলে তিনি আরো দাম আহ্বান করেন। অবশেষে এক ব্যক্তি দুই দিরহামে তা ক্রয় করেন।

এরপর নবী করিম (সা.) সেই অর্থের একটি অংশ দিয়ে খাদ্য কিনে পরিবারকে খাওয়াতে বলেন এবং বাকি অর্থে একটি কুঠার কিনে এনে তাঁর কাছে আসতে বলেন। যখন কুঠারটি আনা হলো, তিনি নিজ হাতে তাতে হাতল লাগিয়ে বলেন, “এখন তুমি জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কেটে বিক্রি করো এবং আমি যেন তোমাকে পনেরো দিন না দেখি।”

পনেরো দিন পর সেই ব্যক্তি ফিরে এলে দেখা যায়, সে দশ দিরহাম উপার্জন করেছে এবং তা দিয়ে খাদ্য ও কাপড় কিনেছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ভিক্ষার চেয়ে এটি অনেক উত্তম। কেননা ভিক্ষা করলে কেয়ামতের দিন তোমার মুখমণ্ডল থাকবে ক্ষতবিক্ষত।’  তিনি ব্যাখ্যা করেন, কেবল তিন শ্রেণির মানুষের জন্য ভিক্ষা গ্রহণ বৈধ—যারা চরম দারিদ্র্যে নিপতিত, যাদের প্রচণ্ড ঋণ রয়েছে, এবং যারা রক্তপণ পরিশোধে অক্ষম। (আবু দাউদ ১৬৪১)

এই হাদিস থেকে মুসলিম জীবনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পাওয়া যায়।

প্রথমত, জীবিকা উপার্জনে সচেষ্ট হওয়া ঈমানদার ব্যক্তির দায়িত্ব। হালাল পেশা গ্রহণ করে সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করা ইসলামের নির্দেশ। মহানবী (সা.) বলেন, ‘নিজ হাতে উপার্জিত রোজগারের চেয়ে উত্তম আহার কেউ কখনও করে না।’ (সহিহ বুখারি ২০৭২)

দ্বিতীয়ত, একজন মুসলিম আত্মসম্মান রক্ষায় সচেষ্ট থাকেন। পরিশ্রম করে রোজগার করার মধ্যে রয়েছে প্রশান্তি ও মর্যাদা। ভিক্ষা মানুষের ব্যক্তিত্বকে ধ্বংস করে দেয় এবং সমাজে একপ্রকার নির্ভরশীলতা ও কর্মবিমুখতার সংস্কৃতি গড়ে তোলে।

তৃতীয়ত, ভিক্ষাবৃত্তিকে অভ্যাসে পরিণত করা শরিয়তসম্মত নয়। কেবল নিরুপায়, অক্ষম এবং চরম দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তি ছাড়া অন্যদের জন্য এটি হারাম। অথচ আজ সমাজে বহু সুস্থ-সবল মানুষও ভিক্ষাবৃত্তিকে পেশা হিসেবে বেছে নিচ্ছে, যা লজ্জাজনক ও অনৈসলামিক।

এই হাদিস আমাদের সামনে একটি স্পষ্ট বার্তা দেয়। নিজের শ্রমেই রয়েছে জীবনের সম্মান ও শান্তি। সমাজে কর্মনিষ্ঠা ও আত্মনির্ভরতা গড়ে তুলতে হলে আমাদের প্রত্যেককে এই শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের মূলমন্ত্র হোক ‘নবীর শিক্ষা করো না ভিক্ষা, মেহনত করো সব।’

সর্বশেষ