শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

|৭ কার্তিক ১৪৩২

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৬:৩২, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

একটি দল জুলাই সনদে স্বাক্ষরের সুযোগ খুঁজছে: সালাহউদ্দিন আহমদ

একটি দল জুলাই সনদে স্বাক্ষরের সুযোগ খুঁজছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
ছবি: সংগৃহীত

একটি রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার সুযোগ খুঁজছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইউট্যাব) উদ্যোগে আয়োজিত ‘চব্বিশোত্তর বাংলাদেশে তারুণ্যের ভাবনায় শিক্ষা ও কর্মসংস্থান’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, 'চব্বিশোত্তর বাংলাদেশে আমাদের প্রত্যাশা ও ভাবনা কী—সেটা নতুন প্রজন্মের দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবতে হবে। আমরা ইতিমধ্যে তরুণদের ভাবনা জানতে বিভিন্ন সভা-সেমিনার আয়োজন করেছি। চব্বিশোত্তর বাংলাদেশের মূল শিক্ষা হলো পরিবর্তন।'

তিনি আরও বলেন, 'সবক্ষেত্রে মেধা, জ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে কাজ করা জরুরি, আর সে ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তারাই তরুণ প্রজন্মকে দিকনির্দেশনা দেন।'

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গবেষণাধর্মী ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, 'খাতভিত্তিক গবেষণামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে, যাতে রিসার্চের মাধ্যমে আমরা গ্লোবাল পর্যায়ে পৌঁছাতে পারি। কর্মমুখী ও সময়োপযোগী কারিকুলাম নির্ধারণের পাশাপাশি নৈতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধসম্পন্ন শিক্ষার দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তন করতে হবে।'

কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'জনসংখ্যার কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে। শুধুমাত্র সরকারের ওপর নির্ভর করলে চলবে না; বরং আত্মনির্ভরশীল হয়ে নিজ উদ্যোগে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।'

জুলাই গণঅভ্যুত্থান প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, 'গণঅভ্যুত্থানের পর যে পরিবর্তনের প্রত্যাশা, তা সর্বত্রই হতে হবে। এটি শুধু চাকরি বা কর্মসংস্থানের প্রশ্ন নয়, বরং দীর্ঘ ১৫-১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে জনরোষের বহিঃপ্রকাশ। তাই দৃষ্টিভঙ্গির সংস্কারই সবচেয়ে জরুরি।'

তিনি বলেন, 'যত সংস্কারই করি না কেন, মানসিক সংস্কার আগে না এলে কোনো পরিবর্তন স্থায়ী হবে না। গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আইনি রূপান্তর ঘটাতে পারলেই জাতির মুক্তি সম্ভব। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে সবাইকে একসঙ্গে হতে হবে।'

জুলাই সনদ নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্কের প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, 'একটি দল বলেছে আমরা নাকি চাপে জুলাই সনদে গণভোটের প্রস্তাব মেনে নিয়েছি। আমরা বলেছি, জাতীয় নির্বাচনের দিনই জুলাই সনদ নিয়ে গণভোট হতে পারে। এখন একটি রাজনৈতিক দল জুলাই সনদে স্বাক্ষর করার সুযোগ খুঁজছে। তাদের কিছু দাবি-দাওয়া আছে, তবে আমরা আশা করছি এর সুন্দর সমাধান হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা আদেশ জারি ও প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জুলাই সনদকে আইনি কাঠামো দিতে পারেন। সবকিছু হতে হবে বাস্তবতার নিরিখে ও আইনের ভিত্তিতে, যাতে ভবিষ্যতে কেউ বাতিলের দাবি তুলতে না পারে।'

স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, 'একটি জাতি গঠনে শিক্ষার বিকল্প নেই। কিন্তু শিক্ষাকে হতে হবে কর্মসংস্থানমুখী ও যুগোপযোগী। সার্টিফিকেটনির্ভর শিক্ষা শুধু বেকারত্ব বাড়িয়েছে। নতুন বাংলাদেশে তরুণদের ভাবনা হতে হবে জ্ঞানভিত্তিক ও চাহিদাভিত্তিক শিক্ষার ওপর।'

সভাপতির বক্তব্যে ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, 'বিগত সরকারের উদাসীনতায় শিক্ষার মান নিয়ে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। তাই শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো ছাড়া বিকল্প নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান ফিরিয়ে আনতে যুগোপযোগী, বিজ্ঞানমনস্ক ও কর্মমুখী শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।'

সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতার হোসেন খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রোভিসি অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, বিএনপির উপদেষ্টা মাহদী আমিন, জাতিসংঘের সাবেক চিফ অব স্টাফ রেহান এ আসাদ প্রমুখ।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম। এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রুয়েটের ভিসি অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুর রাজ্জাক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি অধ্যাপক লুৎফর রহমান ও অধ্যাপক নূরুল ইসলাম, এবং বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মো. শামীম।

সদ্য সংবাদ/এমটি