নারী কৃষকদের ক্ষমতায়নে কৃষি সম্প্রসারণ সেবা

বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতিতে নারী কৃষকদের অবদান অনস্বীকার্য। বীজ বপন, ফসল কাটা, পশুপালন কিংবা সবজি উৎপাদন—প্রতিটি ধাপে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। তবুও তারা প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি, বাজার সংযোগ ও আর্থিক সহায়তার দিক থেকে এখনও পিছিয়ে। এই প্রেক্ষাপটে কৃষি সম্প্রসারণ সেবা নারীদের ক্ষমতায়নের একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে কাজ করতে পারে।
নারী কৃষকদের বর্তমান চিত্র
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, কৃষি খাতে নারীর অংশগ্রহণ প্রায় তেইশ শতাংশ হলেও অধিকাংশই অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে যুক্ত।
গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষক রাবেয়া বেগম বলেন, ‘আমরা মাঠে ধান লাগাই, বীজ সংরক্ষণ করি, কিন্তু আধুনিক চাষ পদ্ধতির প্রশিক্ষণ খুব একটা পাই না।’
কৃষি সম্প্রসারণ সেবার ভূমিকা
এই সেবার মাধ্যমে নারীরা পেতে পারেন—
-
প্রযুক্তি স্থানান্তর: সহজ যন্ত্রপাতি ও আধুনিক কৌশল শেখা
-
চাষাবাদ প্রশিক্ষণ: বীজ নির্বাচন, সার, সেচ, রোগ দমন
-
বাজার সংযোগ: বাজার প্রবেশাধিকার ও মূল্য নির্ধারণে সহায়তা
-
ঋণ সুবিধা: কৃষি ঋণ ও আর্থিক সহায়তা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন,
“নারীদের জন্য ফার্মার ফিল্ড স্কুল, প্রদর্শনী প্লট ও ডিজিটাল পরামর্শ কেন্দ্র চালু করলে তারা আরও আত্মনির্ভর হতে পারবে।”
জরিপের চিত্র
বিষয় | শতাংশ |
---|---|
প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত নারী | ৩৫ |
বাজার তথ্যপ্রাপ্ত | ২৫ |
সম্প্রসারণ সেবায় যুক্ত | ৪০ |
যন্ত্র ব্যবহারে দক্ষ | ১৮ |
সম্ভাবনার ক্ষেত্র
-
ডিজিটাল সেবা: মোবাইল অ্যাপ ও অনলাইন প্রশিক্ষণ
-
গোষ্ঠীভিত্তিক উদ্যোগ: সমবায়ে নারীর অংশগ্রহণ
-
অ্যাগ্রো-প্রসেসিং: ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ
-
নারীবান্ধব যন্ত্রপাতি: হালকা ও সহজ যন্ত্র
সাফল্যের গল্প
কুমিল্লার দেবিদ্বারের হাসিনা আক্তার সম্প্রসারণ সেবা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে সবজি উৎপাদন দ্বিগুণ করেছেন।
“আগে শুধু নিজেদের জন্য ফলাতাম, এখন বাজারে বিক্রি করে মাসে সাত-আট হাজার টাকা আয় করি।”
চ্যালেঞ্জ
-
সামাজিক বাধা
-
জমির মালিকানা না থাকা
-
তথ্যের অপ্রাপ্যতা
-
নারী কৃষি কর্মকর্তার অভাব
বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ
-
নারীবান্ধব নীতি প্রণয়ন
-
আলাদা বাজেট বরাদ্দ
-
নারী প্রশিক্ষক নিয়োগ
-
বাজারে নারীর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণ
পরিশেষে, নারী কৃষকদের ক্ষমতায়ন মানে শুধু একটি পরিবারের উন্নতি নয়, বরং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথ সুগম করা। কৃষি সম্প্রসারণ সেবাকে নারীবান্ধব করে তোলা গেলে লাখো নারী আত্মনির্ভর হবেন এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে আনবেন ইতিবাচক পরিবর্তন।
লেখক: বেগম জেরিনা রেশমা
পদবি: পিএইচডি ফেলো, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
বি.দ্র.: এটি লেখকের নিজস্ব মতামত।