গণঅভ্যুত্থানের এক বছর: নতুন বাংলাদেশ কত দূর?

গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে বাংলাদেশ কোথায়দাঁড়িয়ে? এই প্রশ্নের মূল্যায়ন করতে যেসব প্রশ্ন আসছে, সেগুলোর জবাব পাওয়া আসলে কঠিন।
যে সংস্কারের প্রত্যাশা ছিল, গণতন্ত্রে উত্তরণের যেপ্রতিশ্রুতি ছিল, নাগরিকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গীকারছিল, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধের যে কথা বলাহয়েছিল, সরকারি সেবা জনগণের জন্য সহজলভ্য করার যেআকাঙ্ক্ষা ছিল, সেগুলোর অগ্রগতির দাবি করা যাচ্ছে কি?
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ রাজনীতির ময়দানে নেই।আলোচনা এখন বিএনপি, জামায়াতের সঙ্গেগণঅভ্যুত্থানের নেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপিকে নিয়ে। তিনটি দলই সরকারকে সর্বাত্মকসমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে যাওয়ার কথা বলছে, আবারসরকারের কর্মকাণ্ডে নানা সময় হতাশা, ক্ষোভ প্রকাশেরপাশাপাশি করছে সমালোচনাও।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ সদ্য সংবাদকে বলেন, “আন্দোলনের সময় বলা হয়েছিল নতুন বাংলাদেশ হবে।পুরনো জিনিস থাকবে না। ওই নতুন বাংলাদেশে কি নতুনআমরা পেলাম? হয়তো কিছু পরিবর্তন পাব সংস্কারের মধ্যদিয়ে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষক রেজাউল করিম রনি বলেন, “গণঅভ্যুত্থানে যে সম্মিলিত প্রচেষ্টা এবং ঐক্য আমরা লক্ষ্যকরলাম। কিন্তু দেশ গঠন এবং জনগণকে সেবা পৌঁছেদেওয়ার সম্মিলিত উদ্যোগের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।”
“এই ঘাটতির কারণে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেইআকাঙ্ক্ষা থেকে হতাশার পরিমাণ বাড়ছে,” বলেন তিনি।
লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক রইসউদ্দিন আরিফের মতে, “সংবিধান এবং বিদ্যমান আমলাতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামোরঅধীনে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে। যে কারণে বিপ্লবচলমান রাখা সম্ভব হলো না এবং কখনও সম্ভব না।”
২০২৪ সালের ১ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনেআন্দোলনটা শুরু হয় সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করেদেওয়া সরকারের আদেশ হাইকোর্টে অবৈধ ঘোষণারপ্রতিক্রিয়ায়।
সেই আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলা, পরে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশেরগুলিতে শিক্ষার্থী আবু সাঈদের হত্যার পর অগ্নিগর্ভ হয়দেশ। পুলিশের নির্বিচারে গুলিতে শত শত মানুষেরপ্রাণহানির পর মৃত্যুভয় ভুলে সাধারণ জনতার পাল্টাআক্রমণে সরকার টিকতে পারেনি কারফিউ আরোপকরেও। ৫ আগস্ট রচিত হয় আন্দোলনের সাফল্যগাথা।
দিনপঞ্জিকার পাতা উল্টে ৩৬৫ দিন পর আবার এসেছেসেই অবিস্মরণীয় ৫ আগস্ট, সেই সঙ্গে হচ্ছে চুলচেরাবিশ্লেষণ, করার কথা ছিল যা, তা কি হয়েছে?
সরকার পতনের ৩ দিন পর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে যেঅন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়, তার অগ্রাধিকারে শুরু থেকেইআছে সংস্কার। এখনও আলোচনা সেটি নিয়েই।
তবে এই সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেবিভক্তি স্পষ্ট, যেটি অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপদিতে বাধা দেয় কি না, এ নিয়েই এখন প্রশ্ন।
অভ্যুত্থানের পর নতুন করে আলোচনায় আসা জামায়াতেইসলামী অবশ্য খুশি আওয়ামী লীগের পতনে। তারানির্বিঘ্নে রাজনীতি করতে পারছে, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়েগুরুত্ব পাচ্ছে, সেটি অনেক স্বস্তির।
দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমানআযাদ দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেন, “গণঅভ্যুত্থানেরএক নম্বর সফলতা হলো ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে একহয়ে থাকতে পারা। আন্দোলনের মুখে হাসিনার পলায়ন, এর পর সরকারের ক্ষমতায় থাকা এটাও একটা সফলতা।”
বিশৃঙ্খলার দীর্ঘ ছায়া
অভ্যুত্থানের পরে সাধারণত যে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়, বাংলাদেশও তার বাইরে নয়। অথচ, যেহেতু অভ্যুত্থানটিছিল বহুপক্ষীয়, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে, বিশৃঙ্খলাদীর্ঘায়িত হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু বাস্তবতা হয়েছে ঠিকউল্টো।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হলেও তার কার্যকারিতাপ্রশ্নবিদ্ধ। গণতান্ত্রিক উত্তরণের বদলে প্রাধান্য পেয়েছেরাজনৈতিক বিভক্তি, দ্বন্দ্ব এবং “কে কতটা ক্ষমতা নিজেরদিকে টানতে পারে”—এই প্রতিযোগিতা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক রেজাউল করিম রনি দেশকাল নিউজডটকমকে বলেন, “যৌথ চেষ্টার যে ঐক্য আমরা অভ্যুত্থানেদেখেছিলাম, সেটা কোথাও গিয়ে থেমে গেছে। এতেমানুষের প্রত্যাশা হতাশায় রূপ নিচ্ছে।”
অধ্যাপক সাব্বির বলেন, “আন্দোলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণবক্তব্য ছিল বৈষম্য বিলোপ। কিন্তু বৈষম্য রয়েই গেছে।
“রাজনীতিকীকরণ, দলীয়করণের প্রবণতা তো বন্ধ হলোনা। নতুন এক পক্ষ সুবিধা পাচ্ছে, রাষ্ট্রের বিভিন্নপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এই দলীয়করণটাকেই প্রাধান্য দেওয়াহলো।”
তবে জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির সদস্য সচিব আকরাম হোসাইন সদ্য সংবাদকে বলেন, “এক বছরে সরকারের সবচেয়ে বড় সফলতা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। বিপ্লবের পর সাধারণত নানা পক্ষ ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য অসম প্রতিযোগিতা শুরু করে। ফলে রাষ্ট্র অস্থিতিশীল হয়ে যায়। আরব বসন্তের পর বিভিন্ন দেশের চিত্র এটির উদাহরণ। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এনসিপি, জামায়াতে ইসলাম এবং বিএনপি খুবই সহনশীল আচরণ করেছে এক্ষেত্রে।”
নতুন সরকারের দুর্বলতা কোথায়
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, অভ্যুত্থানেরপর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে মাঠের তৃণমূলেঅভিজ্ঞতাসম্পন্ন নেতা-কর্মীদের দেখা যায়নি। প্রথম থেকেইজনমনে প্রশ্ন ছিল-এই সরকার কতটা জনগণেরপ্রতিনিধি?
“তবু আশা ছিল, সরকার অন্তত একটি গ্রহণযোগ্যনির্বাচনের দিকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তুআইনশৃঙ্খলা, পুলিশ সংস্কার, আমলাতন্ত্র সংস্কারের মতোমৌলিক বিষয়ে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি,” বলেনতিনি।
নতুন সরকার এলে খুব একটা পরিবর্তন হবে বলে মনেকরেন না রইসউদ্দিন আরিফ। তিনি বলেন, “এখন একটানির্বাচন হবে। বিএনপি অথবা জামায়াত অথবা এই ধাঁচেরসরকার গঠন হবে। এরা একটু উদার হবে। কিন্তু দেশেরঅর্থনীতিতে মৌলিক কোনো পরিবর্তন হবে, এটা হওয়ারপ্রশ্নই আসে না। কারণ আপনার রাষ্ট্র এখনও আমলাদেরদখলে।”
এনসিপি নেতা আকরাম হোসাইন বলেন, “সরকারের বড় ব্যর্থতা হলো বিচার এবং সংস্কার আশানুরূপভাবে করতে না পারা। সবচেয়ে বড় সংস্কার দরকার ছিলে শিক্ষা খাতে, সেখানে ছিটেফোঁটাও হয় নাই। প্রশাসনিক সংস্কারে হাতও দেওয়া যায়নি। পুলিশের সংস্কার দরকার ছিল।”
সংবিধান ও সংস্কার বিতর্ক
গণপরিষদ ও নতুন সংবিধানের প্রস্তাবনা ছিল আন্দোলনেরঅন্যতম মূল দাবি। কিন্তু বড় রাজনৈতিক দলগুলো এইবিষয়ে দ্বিধান্বিত। কেউ কেউ স্পষ্টভাবে এর বিরোধিতাকরছে। সংবিধান প্রণয়নের মতো মৌলিক ইস্যুতে জাতীয়ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টার চেয়ে দলীয় অবস্থান দৃঢ় করাবেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।
“নতুন সংবিধান দরকার কি না-এই মৌলিক প্রশ্নেইঐকমত্য নেই। আর যতদিন এই মতভেদ থাকবে, সংবিধান সংস্কার এগোবে না,” মন্তব্য করেন রেজাউলকরিম রনি।
“এখন একটি অপেক্ষাকৃত উদার সরকার আসবে, কিন্তুরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিবর্তন হবে না। আমলারা যেমননিয়ন্ত্রণে ছিল, তেমনি থাকবে।”
বাংলা একাডেমির সভাপতি আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, “গত এক বছর মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে উপদেষ্টাপরিষদ জনজীবনের উন্নতি, রাজনৈতিক দলগুলোররাজনৈতিক উন্নতি এসব বিষয়ে কোনো চিন্তা করেনি।
“রাজনৈতিক সংস্কার, রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার একান্ত দরকার।কিন্তু জনগণের সামনে কোনো পরিচ্ছন্ন বক্তব্য না দিয়েএই সংস্কার অসম্ভব।”
অধ্যাপক সাব্বির বলেন, “কিছু সংস্কার এই সরকারকরেছে, যেগুলো হয়তো সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কাজেলাগবে।”
লেখক রইসউদ্দিন আরিফ বলেন, “এখন যেটা হচ্ছে, সেটাহলো জোড়াতালি দিয়ে কিছু সংস্কার। রাষ্ট্রের চরিত্রের যেপরিবর্তন, সেটা তো হচ্ছে না। বিশেষ করে রাষ্ট্রের প্রশাসন, অর্থনৈতিক কার্যক্রম বা রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যেকার্যক্রমগুলো, এগুলো তো আগের মতই আছে।এগুলোকে বজায় রেখে কোনোভাবে আর বিপ্লবের দিকেযাওয়া সম্ভব না।”
জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, “সংস্কারতো একটি পর্যায়ে আসছে, মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্যহয়েছে। এখন সরকারের দায়িত্ব হলো এর আইনি ভিত্তিদেওয়া এবং সময়মতো বাস্তবায়ন। সংস্কারকে এখন একটিফ্রেমে এনে বাস্তবায়ন করতে হবে। এটার আলোকেনির্বাচন দিতে হবে।”
জনতার দৃষ্টিভঙ্গি: বৈষম্য ও হতাশা
যেখানে প্রত্যাশা ছিল সমতা ও মর্যাদার ভিত্তিতে রাষ্ট্রবিনির্মাণ, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে নতুন সুবিধাভোগী গোষ্ঠীরউত্থান। এক দল ক্ষমতা হারিয়ে অন্য দল ক্ষমতায়-এইচক্রই যেন অব্যাহত।
অধ্যাপক সাব্বির বলেন, “বৈষম্য তো রয়ে গেছে। এখনওদলীয়করণ, সুযোগভোগের সংস্কৃতি চলছে।”
রেজাউল করিম রনি বলেন, “এখানে নানা রকম বিপ্লবীআকাঙ্ক্ষা আছে। দাবি আছে গণপরিষদ, নতুনসংবিধানের। সেগুলো জনসম্মতির ভিত্তিতে কার্যকর করতেহবে।”
কিন্তু এখানে জটিলতা দেখছেন তিনি। বলেন, “একটা বড়রাজনৈতিক দল যদি মনে করে নতুন সংবিধান দরকারনেই। কিন্তু আবার অভ্যুত্থানের শক্তি মনে করে নতুনসংবিধান দরকার আছে। তাহলে মীমাংসাটা আপনিকীভাবে করবেন?”
রাজনীতির নবচেতনা ও তরুণ প্রজন্ম
সব সংকটের মধ্যেও একটাই আশার আলো-একটি নতুনপ্রজন্ম রাজনীতি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে। যারা এতদিন‘আই হেট পলিটিক্স’ বলত, তারাই আজ মাঠে, মিছিলে, টেবিলে। তারা বুঝছে রাজনীতির গুরুত্ব। তবে তাদেরনেতৃত্ব কে দেবে? তারা কোথায় গিয়ে থামবে? তার উত্তরএখনও অজানা।
রেজাউল করিম রনি বলেন, “সবচেয়ে ভালো লাগার জিনিসহলো একটা প্রজন্মের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা তৈরিহয়েছে এবং যে প্রজন্মকে আমরা ‘আই হেট পলিটিক্স’ জেনারেশন বলতাম, তারা রাজনৈতিকভাবে কাজ করছে, এটা আশার কথা।”
এর মধ্যে অভ্যুত্থানের নেতাদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টিযাত্রা শুরু করেছে। জুলাই অভ্যুত্থানের মাসে তারাদেশজুড়ে পদযাত্রা করে নিজেদের বক্তব্যের জানান দিয়েএসেছে তৃণমূলে।
এনসিপির মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সদ্য সংবাদকে বলেন, “আমরা বিশ্ববাসীর কাছে বার্তা রাখতে পেরেছি যে বাংলাদেশের মানুষ ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আপোষ করেনি এবং কখনও ভবিষ্যতেও করবে না।”
পরিবর্তন না হওয়ার পিছনে প্রতিবন্ধকতা কী- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমরা নতুন কিছু গ্রহণ করতে পারি না। দলীয় স্বার্থের উপরে উঠে দেশের স্বার্থ আমরা দিতে পারিনি। সকল দলের প্রতি আমাদের আহ্বান, দলীয় স্বার্থের উপর দেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে।”
নির্বাচনের পথে: সিদ্ধান্তহীনতা ও দ্বিধা
দেশে দ্রুত নির্বাচন আয়োজনের চাপ বাড়ছে। বিএনপিচলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে ভোটের জন্য চাপ দিলেওপরে ফেব্রুয়ারিতে ভোটের কথায় আশ্বস্ত হয়েছে। অন্তর্বর্তীসরকার বলছে, ইতিহাসের সবচেয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচনকরবে।
তবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি, পুলিশ বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তাসহনানা কারণে ভোট নিয়ে শঙ্কা রয়েই গেছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “গত এক বছরে পাওয়ার মতো জায়গা হলো, লন্ডনে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ, আর নির্বাচন দ্রুত দেয়ার প্রতিশ্রুতি। এর মানে হলো, ইন্টেরিম জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। জনগণ যে আশায় এই অভ্যুথানে অংশ নিয়েছিল, তাদের যে চাওয়া-পাওয়া সেগুলো পূরণ করতে সরকার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তবে, রাজনৈতিক চরিত্রের জায়গা থেকে অনেকেই নির্বাচন পেছানোর পাঁয়তারা করছে, ইতিমধ্যে নানাভাবে আমাদের এবং খোদ সরকারকেই আক্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু, আমরা এবং ইন্টেরিম তা প্রতিরোধ করেছি। সব মিলিয়ে বলব, রাজনৈতিক সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ হয়েছে, যা ছিল না।”
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিনা হলে নির্বাচন হবে কীভাবে?’’
রাজনৈতিক বিশ্লেষক রেজাউল করিম রনি বলেন, “শুধুনির্বাচন নয়, গণতান্ত্রিক কাঠামো উন্নয়নের জন্য সবাইমিলে যেভাবে এগিয়ে নেওয়া দরকার, তার চেয়ে যার যারঅবস্থান তৈরি করার দিকেই মনোযোগ বেশি দেখা যাচ্ছে।”
এই এক বছরে দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির নতুন যুগেরসূচনা হয়েছে বলা চলে। জামায়াতে ইসলামী, ইসলামীআন্দোলন আর হেফাজতে ইসলাম তো বটেই, ছোট ছোটইসলামপন্থি দলও সরকারে গুরুত্ব পাচ্ছে। তাদের বক্তব্যও অবস্থানকে সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে-এই বিষয়টিও স্পষ্ট।
পুলিশ-আমলাতন্ত্রে সংস্কার কোথায়
আইনশৃঙ্খলার দৃশ্যমান উন্নতি করতে না পারারসমালোচনা সরকারকে বিদ্ধ করছে। প্রকাশ্যে অপরাধঘটলেও পুলিশ বাহিনী কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছেবলে সব পক্ষ থেকেই বলা হচ্ছে।
রেজাউল করিম রনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা ভালো হবে না।কারণ, পুলিশ সংস্কার সবার আগে করা উচিত ছিল, সেটাতারা করেনি। এটার জন্য খেসারত জনগণকে দিতে হচ্ছে।
“অগ্রাধিকারের ক্ষেত্রে সরকার কীভাবে চিন্তা করে সেটানিয়ে একটা প্রশ্ন করা উচিত আমাদের। সরকার সমস্তসংস্কারই দরকার ঠিক আছে, কিন্তু কোনটা আগে, কোনটাএই মুহূর্তে জনগণের বেশি দরকার-সেটার আলোকেতারা চিন্তা করবে না। এটাই একটা সমস্যা।”
আমলাতান্ত্রিক সংস্কারও হয়নি বলে মন্তব্য করে তিনিবলেন, “আকাঙ্ক্ষা পূরণের চাপ সবই মাঠ থেকে উঠেআসতে হবে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ থেকে নয়।”
জামায়াত নেতা হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির ব্যর্থতা আছেসরকারের। পুলিশ তো এখনো ফাংশনাল না।
“দ্বিতীয়ত, দেশে যে অস্থিতিশীলতা, সেটাকে আরওকঠোরভাবে দমন করতে হবে। তৃতীয় বিষয় হলো সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব, জনগণের জানমালেরনিরাপত্তাহীনতা। চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেট-এগুলো তোসরকার ভাঙতে পারেনি।”