ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন
আদানিকে রক্ষায় গোপনে ৩৯০ কোটি ডলারের ব্যাবস্থা মোদি সরকারের!
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আবারও বিতর্কের কেন্দ্রে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট-এর একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, নানা অনিয়মের অভিযোগে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা গৌতম আদানিকে ঋণ দিতে অনাগ্রহ প্রকাশ করলে তাঁর পাশে দাঁড়ায় মোদি সরকার। রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (এলআইসি) অব ইন্ডিয়াকে ব্যবহার করে আদানি গ্রুপকে বাঁচাতে গোপনে প্রায় ৩৯০০ কোটি রুপি (৩.৯ বিলিয়ন ডলার) বিনিয়োগের পরিকল্পনা নেয় সরকার।
ওয়াশিংটন পোস্টের হাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৫ সালের মে মাসে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়, আর্থিক পরিষেবা বিভাগ (ডিএফএস), এলআইসি ও নীতি আয়োগ যৌথভাবে এই বিনিয়োগ কৌশল প্রণয়ন করে। পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য ছিল আদানি গ্রুপের বন্ড ও ইক্যুইটিতে বিপুল অঙ্কের সরকারি অর্থ ঢালা, যাতে বাজারে তাঁর প্রতি ‘আস্থার বার্তা’ দেওয়া যায়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে আদানি পোর্টসের ৫৮৫ মিলিয়ন ডলারের একটি বন্ড ইস্যু পুরোপুরি অর্থায়ন করে এলআইসি একাই। ৩০ মে আদানি গ্রুপ জানায়, ওই বন্ডের একমাত্র বিনিয়োগকারী এলআইসি। সমালোচকেরা এই পদক্ষেপকে সাধারণ মানুষের অর্থের সরাসরি অপব্যবহার বলে আখ্যা দিয়েছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, লাখ লাখ নিম্ন আয়ের মানুষের জীবন বীমা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান এলআইসি একটি রাজনৈতিকভাবে ঘনিষ্ঠ বেসরকারি করপোরেশনে এত বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করে উচ্চ ঝুঁকির পথে হাঁটছে।
স্বাধীন অর্থনীতি বিশ্লেষক হেমেন্দ্র হাজারি বলেন, 'একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এলআইসি-এর এমন বিনিয়োগ অত্যন্ত অস্বাভাবিক। এলআইসি-এর ক্ষতি হলে সেটি উদ্ধার করতে হবে সরকারের অর্থে।'
অন্যদিকে বিরোধী দলগুলোও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ মহুয়া মৈত্র অভিযোগ করেছেন, ভারতীয় করদাতাদের টাকা আদানির পিগিব্যাঙ্কে ঢালা হচ্ছে। সরকার তাঁকে বারবার আর্থিকভাবে উদ্ধার করছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এক্স-এ লিখেছেন, আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের অভিযোগ ওঠার পর মাত্র কয়েক ঘণ্টায় এলআইসি-এর ৭ হাজার ৮৫০ কোটি রুপির ক্ষতি হয়। তিনি এই ঘটনাকে ‘মোদানি মেগাস্ক্যাম’-এর অংশ হিসেবে অভিহিত করেন।
প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক শর্ট-সেলার হিন্ডেনবার্গ আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে শেয়ার কারচুপি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তোলে। এর পর থেকে বহু বিদেশি ব্যাংক ও বিনিয়োগ সংস্থা আদানিকে ঋণ দিতে পিছিয়ে যায়। কিন্তু সেই সময়ও ভারতীয় সরকারি সংস্থাগুলো তাঁকে ‘দূরদর্শী উদ্যোক্তা’ হিসেবে বর্ণনা করে এবং তাঁর ব্যবসাকে ‘জাতীয় অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ’ বলে দাবি করে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ও সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) আদানি গ্রুপ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কোটি কোটি ডলারের ঘুষ ও জালিয়াতির অভিযোগ তদন্ত করছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, জ্বালানি চুক্তি পেতে ভুয়া তথ্য দেওয়া হয় এবং অন্তত ২৫০ মিলিয়ন ডলারের অবৈধ লেনদেন হয়েছে। যদিও আদানি গ্রুপ এই অভিযোগকে “সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন” বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্ট-কে দেওয়া বিবৃতিতে আদানি গ্রুপ জানায়, সরকারের বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তারা রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে দাবি করেছে, তাদের ব্যবসায়িক উত্থান নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক উত্থানের অনেক আগেই শুরু হয়েছিল।
সদ্য সংবাদ/এমটি



























