জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব পদে আলোচনায় প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস!
জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের দায়িত্ব শেষ হবে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর। তার উত্তরসূরি কে হবেন এই প্রশ্নকে ঘিরে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে ইতোমধ্যেই তৎপরতা শুরু হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় এসেছে একাধিক নাম, যার মধ্যে রয়েছেন নোবেলজয়ী ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
যদিও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় জানাচ্ছে, জাতিসংঘ মহাসচিব পদে প্রার্থী হওয়ার খবরটি নিছক গুজব, তবু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন সূত্র বলছে, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও ড. ইউনূসের নাম আলোচনায় থাকা নতুন কিছু নয়।
জাতিসংঘ মহাসচিব নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা চলতি বছরের শেষ দিকে। সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশন থেকেই নতুন মহাসচিব নির্ধারণে আলোচনা শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। ধীরে ধীরে প্রার্থীদের নামও প্রকাশ্যে আসছে।
চিলির সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল ব্যাশেলে, আর্জেন্টিনার মারিয়ানো গ্রসি ও কোস্টারিকার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রেবেকা গ্রিনস্প্যানের নাম এখন পর্যন্ত আলোচনায় আছে। যদিও আনুষ্ঠানিক তালিকায় ড. ইউনূসের নাম নেই, তবু কূটনৈতিক মহলের ধারণা—তার প্রতি আন্তর্জাতিক আগ্রহ এবং গ্রহণযোগ্যতা এ আলোচনাকে স্বাভাবিক করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ছয় মাস আগে থেকেই স্থানীয় পর্যায়ে ড. ইউনূসের সম্ভাব্য প্রার্থিতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে সরকারি পর্যায়ে এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। অনেকে মনে করেন, জাতিসংঘের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের ফলেই এই গুঞ্জন ছড়িয়েছে। গুতেরেসের সঙ্গে সম্প্রতি নিউইয়র্কে প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎও সেই জল্পনাকে আরও উসকে দিয়েছে, যদিও সেখানে মহাসচিব পদ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না তা নিশ্চিত নয়।
এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন গুজব, এর কোনো বাস্তব ভিত্তি নেই।’
তবুও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা মনে করেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আন্তর্জাতিক পরিচিতি, মানবকল্যাণে কাজ এবং কূটনৈতিক গ্রহণযোগ্যতা তাকে জাতিসংঘের মহাসচিব হিসেবে একটি সম্ভাব্য ও সম্মানজনক প্রার্থী করে তুলেছে।
তারা আরও জানান, মহাসচিব পদের আঞ্চলিক পালাবদল প্রথা অনুযায়ী এবার আফ্রিকা বা লাতিন আমেরিকার কোনো দেশ থেকে প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ২০০৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এশিয়া থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার বান কি মুন দায়িত্ব পালন করেছেন এবং তার পরবর্তী ছিলেন ইউরোপের পর্তুগালের গুতেরেস। তাই পুনরায় এশিয়া থেকে প্রার্থী মনোনয়নের সম্ভাবনা তুলনামূলক কম।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ‘আমাদের কাছে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব বা নির্দেশনা আসেনি। জাতিসংঘের প্রক্রিয়া অনুযায়ী যদি কোনো দেশ প্রার্থী প্রস্তাব করতে চায়, তা সাধারণ পরিষদে আলোচনার মাধ্যমে এগোবে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব নির্বাচনের প্রস্তুতি ঘিরে বৈশ্বিক কূটনৈতিক অঙ্গন এখন সরব। গুতেরেসের পর কে আসবেন—এই প্রশ্নে যেমন আঞ্চলিক ভারসাম্য বিবেচিত হচ্ছে, তেমনি নেতৃত্বগুণ ও বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতাও আলোচনায় রয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মহলেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামটি ক্রমেই গুরুত্ব পাচ্ছে।



























