আফগানিস্তানে ফের শক্তিশালী ভূমিকম্প, বাড়ছে নিহতের সংখ্যা

দুই দিনের ব্যবধানে আবারও তীব্র ভূমিকম্প কাঁপিয়ে দিল আফগানিস্তানকে। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ৫ দশমিক ৫ মাত্রার নতুন কম্পন অনুভূত হয়, যা মুহূর্তেই আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয় সাধারণ মানুষের মাঝে।
এর আগে রোববার রাতে আঘাত হানা ৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে একের পর এক গ্রাম মাটির সঙ্গে মিশে যায়। এখন পর্যন্ত অন্তত এক হাজার চার শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে এবং আহত হয়েছেন তিন হাজারের বেশি। ভেঙে পড়েছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, মঙ্গলবারের নতুন কম্পনে ক্ষয়ক্ষতি ও হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়বে। খবর রয়টার্স।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, মঙ্গলবারের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল মাটির প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে, যা আগেরটির কাছাকাছি। এর ফলে পাহাড় ধসে বন্ধ হয়ে যায় বেশ কিছু সড়ক, বাধাগ্রস্ত হয় উদ্ধারকাজ। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের জীবিত বের করে আনা কঠিন হয়ে পড়েছে।
মানবিক সহায়তা সংস্থা আসিলের কর্মী সাফিউল্লাহ নূরজাই জানিয়েছেন, নতুন ভূমিকম্পে আবারও বহু মানুষ আহত হয়েছেন এবং মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদকের ভাষ্য অনুযায়ী, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রায় প্রতিটি বাড়িই ধসে গেছে বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। স্থানীয়রা এখনও হাতে খুঁড়ছে ধ্বংসস্তূপ, অনেকে ভাঙা ঘরের নিচে চাপা পড়ে আছেন। যেসব বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত ছিল, সেগুলোও মঙ্গলবারের কম্পনে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে।
তালেবান সরকারের মুখপাত্র জবিউল্লাহ মুজাহিদ জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৪১১ জন নিহত, ৩ হাজার ১২৪ জন আহত এবং ৫ হাজার ৪০০-এর বেশি ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। জাতিসংঘ সতর্ক করেছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
আন্তর্জাতিক শিশু সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জরুরি তহবিল গঠনের আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থার পরিচালক সামিরা সাঈদ রহমান বলেছেন, এখন জীবন রক্ষার লড়াই সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে। আহতদের উদ্ধার করা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য ও আশ্রয় পৌঁছে দেয়া এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় কুনার ও নানগারহার প্রদেশ। দুর্গম গ্রামগুলোতে পৌঁছাতে অ্যাম্বুলেন্সের দীর্ঘ সারি চোখে পড়ছে। আহতদের সরিয়ে নিতে ও ত্রাণ পৌঁছে দিতে তালেবান প্রশাসন হেলিকপ্টার ব্যবহার করছে।
জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ জানিয়েছে, হাজারো শিশু বর্তমানে গুরুতর বিপদের মুখে। তারা ইতোমধ্যেই ওষুধ, শীতবস্ত্র, তাঁবু, টারপলিন, সাবান, স্যানিটারি সামগ্রী ও পানির বালতি পাঠানো শুরু করেছে।
অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এ পর্যন্ত অন্তত ১২ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ঘরবাড়ি হারানো বহু মানুষ খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন, আফটারশকের আতঙ্কে তাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।
আসিলের কর্মী নূরজাই বলেন, ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ায় মানুষজন খোলা আকাশের নিচে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন, আর একের পর এক আফটারশক তাদের ভয় আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। এখনই খাদ্য, আশ্রয় ও জরুরি সহায়তা পৌঁছে দেয়া প্রয়োজন।