শনিবার, ২৫ অক্টোবর ২০২৫

|৮ কার্তিক ১৪৩২

শীর্ষ সংবাদ:

ফিরলেন ৩০৯ জন, লিবিয়ায় মাফিয়া চক্রে বাংলাদেশি
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারে বিএনপিতে ফিরলেন সাত
নেতাপশ্চিম তীরে ‘ইসরাইলি সার্বভৌমত্ব’ চাপিয়ে দেয়ায় বাংলাদেশের নিন্দা
নভেম্বরের মধ্যেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান: সালাহউদ্দিন আহমদ
রুশ তেলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব জ্বালানির বাজারে কতোটা পড়বে?
নসিংদীতে বাসের চাপায় অটোরিকশার চালক ও দুই যাত্রী নিহত
যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় দুর্ভিক্ষ কমেনি: ডব্লিওএইচও
নির্বাচনে মাঠে থাকবে ছয় লাখ আনসার সদস্য
উপদেষ্টারা প্রার্থী হতে পারবেনা, দাবি নাগরিক জোটের
২৪ ঘণ্টায় ৪৬৮ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সহসাই থামছে না, ট্রাম্পের গলদঘর্ম
এইচ-১বি ভিসা সংস্কারে হোয়াইট হাউসের সমর্থন

কুবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৭:৪১, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ২০:১৫, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

সাংবাদিকদের টাকা-মোবাইল দেয় শিক্ষকরা: কুবি উপাচার্য

সাংবাদিকদের টাকা-মোবাইল দেয় শিক্ষকরা: কুবি উপাচার্য
ছবি: সংগৃহীত

টাকা পয়সা এবং মোবাইল-টোবাইলও কিনে দিযে কিছু শিক্ষক সাংবাদিকদের জঘন্যভাবে ব্যবহার করছে বলে মন্তব্য করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী।

গত মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনটিভির প্রতিবেদক মুঠোফোনে ভিন্ন একটি সংবাদের জন্য বক্তব্য নেওয়ার সময় তিনি একথা বলেন।

উপাচার্য বলেন, 'আপনাকে কে পাঠিয়েছে এটা জানা আমার খুব দরকার। আমি এখানে দেখেছি কিছু শিক্ষক জঘন্যভাবে সাংবাদিকদের ব্যবহার করছে। আপনাদের টাকা পয়সাও দেয় শুনেছি, মোবাইল-টোবাইলও কিনে দেয় শুনেছি।'

অ্যাকাডেমিক বিষয়গুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য দেখেন কিনা, এই বিষয়ে নিশ্চিত উপাচার্য বলেন, 'আপনি কীভাবে জানলেন, আমাকে বলেন আপনাকে কে পাঠিয়েছে? প্লিজ, আমাকে নিশ্চিতভাবে জানাবেন। আপনি কী জানেন সব কিছুর জন্য দায়ী ভিসি? কিছু হলেই সব ভিসির দোষ। আরেকজন কীভাবে দেখভাল করেন? সরি টু সে আপনাকে কোনো শিক্ষক পাঠিয়েছে। সে শিক্ষকটা কে আমাকে বলেন একটু।'

কোন শিক্ষক আমাকে পাঠায়নি এবং সংবাদের স্বার্থেই জানতে চেয়েছে বলে প্রতিবেদক জানালে তিনি বলেন, 'ডেফিনেটলি পাঠিয়েছে প্লিজ, আপনি এখানকার ছাত্র। আমি আপনার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে পারব, বলেন।'

পরবর্তীতে আবারও উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলীর কাছে উক্ত অভিযোগের তথ্য প্রমাণের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আমি একা না, এটা প্রচলিত। সব সময় শুনছি সাংবাদিকরা শিক্ষকের ঘরে যাচ্ছে, শিক্ষকের সাথে বসছে, শিক্ষকরা এদের উপহার দিচ্ছে এসব আমার কানে অহরহ আসছে। এনটিভির প্রতিবেদক আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিল আমি প্রমাণ দিতে পারবো কি না? আমি বলেছি— হ্যাঁ, অবশ্যই পারবো। কারণ আমি তো এটা অহরহ শুনেছি। একজন-দুজন থেকে নয়। শিক্ষক সাংবাদিককে মোবাইল ফোন দিয়েছে এটা শুনেছি; টাকা-পয়সাও দিয়েছে, এটাও শুনেছি।’

শোনা কথার ভিত্তিতে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে এমন কথা বলা যায় কি না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অনেক কথাই তো ফরমালভাবে বলা যায় না।’

ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, 'আমার পঁয়ত্রিশ বছরের শিক্ষকতা জীবনে এই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে প্রথম ছাত্র সাংবাদিক দেখেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কখনো ছাত্র সাংবাদিক দেখিনি।’

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ বাংলাদেশের প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছে এবং সংগঠনও রয়েছে। 

এবিষয়ে অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী বলেন, ‘করতেই পারে। তবে আমার সামনে কখনো পড়েনি। আমার বিভাগেও এমন কাউকে দেখিনি যে পড়াশোনার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করছে। ওখানে কোনো সাংবাদিকের বিভাগে ঢোকার ক্ষমতাও নেই। তারা টিএসসি ব্লকেই থাকে, ওই এলাকাটাই তাদের।

তিনি আরও বলেন, ‘টিএসসিতে অসংখ্য ঘর আছে, ওখানেই সাংবাদিক সংগঠনের ঘরও আছে। তারা টিএসসি থেকে কলা ভবনের সামনের এলাকায় চলাফেরা করে। কিন্তু, বিভাগে ঢোকার জায়গা তাদের আছে কি না আমি জানি না। আমরা তো সায়েন্সের এই দিকে এখানে এমন কাউকে দেখি না যে পড়াশোনাও করছে আবার সাংবাদিকতাও করছে। এখানে এসেই প্রথম এমন দেখলাম।’

প্রমাণ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘আমি প্রমাণ জোগাড় করতে পারবো। যারা আমাকে এসব বিষয় জানিয়েছে, আমি তাদের সঙ্গে কথা বলবো।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস সাংবাদিকদের নিয়ে উপাচার্যের এই মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন মোজাহিদ বলেন, 'একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে তিনি যেভাবে কথা বললেন সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং মর্মাহত করেছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা যে অবদান রেখেছে এটা সর্বজনস্বীকৃত। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা ক্যাম্পাস সাংবাদিকতা করেছে তাদের উনি যেভাবে ছোট করেছেন আমি মনে করি সেটা একটা অশুভনীয় কাজ হয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান নয় বরং ফ্যাসিবাদের আমল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি যেভাবে শিক্ষার্থীদের জন্য, দেশ ও জাতির কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে আসছে সেখানে ক্যাম্পাস রিপোর্টাররা জড়িত ছিল।'

তিনি আরও বলেন, 'স্যার (কুবি উপাচার্য) হয়তো ওইভাবে রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিসি মেকিং কিংবা শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষায় ওইভাবে সক্রিয় থাকতে দেখা যায়নি। সেজন্য উনি এই বিষয় সম্পর্কে অবগতও না কারা কীভাবে কাজ করছে। উনি কখনো কোনো হলের প্রভোস্টও ছিলেন না, ডিনও ছিলেন না। আমি মনে করি উনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো স্টেক হোল্ডার বা বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে ওইভাবে ধারণা রাখেন না সে কারণেই উনি এই কথাটা বলেছেন।'

এবিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এনটিভির প্রতিনিধি ফরহাদ হোসাইন হিমু বলেন, 'পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমি মাননীয় উপাচার্যকে ২১ অক্টোবর ফোন দেই। উনার কাছ থেকে এধরনের মন্তব্য কখনো প্রত্যাশা করিনি। দুই বছরের বেশি সময় ধরে ক্যাম্পাস সাংবাদিকতার সঙ্গে আছি, সবসময় গুড জার্নালিজম প্র্যাকটিস করার চেষ্টা করি। উপাচার্য স্যারের এধরনের মন্তব্যের পর বিষয়টি নিয়ে আমি বিব্রতবোধ করি। উনি শোনা কথার ভিত্তিতে সকল ক্যাম্পাস সাংবাদিককে নিয়ে এমন মন্তব্য করেছেন, এটা দুঃখজনক।'

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইমতিয়াজ হাসান রিফাত বলেন, 'একজন উপাচার্য; যিনি বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবক তিনি শোনা কথার ভিত্তিতে সাংবাদিকদের নিয়ে এমন মন্তব্য করতে পারেন না। গত জুলাই আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের সময় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের যে অবদান ছিল, এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দুর্নীতি-অনিয়ম নিয়ে ক্যাম্পাস সাংবাদিকরা যে ভূমিকা রেখেছে তিনি এই মন্তব্যের মাধ্যমে তা অস্বীকার করেছেন। পাশাপাশি, শিক্ষকদেরও তিনি এই মন্তব্যের মাধ্যমে অপমান করেছেন বলে আমি মনে করি। এমন মন্তব্যের জন্য তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।'

মো সিফাত হোসেন/এমটি

সর্বশেষ