দিনমজুরি করে এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেল সালমান
অভাব-অনটনের মধ্যেও হার মানেনি কুড়িগ্রামের মেধাবী শিক্ষার্থী সালমান ফারসী বুলু। দিনমজুর বাবার সংসারে চরম আর্থিক সংকটেও পড়াশোনা চালিয়ে এবার এইচএসসি (কামিল) পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়েছে সে।
ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত পূর্ব ধণিরাম গ্রামের দিনমজুর আবেদ আলী ও গৃহিণী দুলালী বেগমের ছোট ছেলে সালমান ফারসী বুলু। তিন ভাইবোনের মধ্যে সে সবার ছোট। সংসারের সম্বল বলতে মাত্র আট শতক বাড়িভিটা। বাবার হাঁটুর ব্যথায় কাজকর্ম কমে গেলে সংসারে নেমে আসে দুর্দিন। বড় ভাই দুলু মিয়া তখন অষ্টম শ্রেণি ছেড়ে কাঠমিস্ত্রীর কাজে যোগ দেন। তবে সালমানকে পড়াশোনা বন্ধ করতে দেননি বাবা-মা।
পড়াশোনার খরচ যোগাতে সালমান বছরে দুই থেকে তিন মাস ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় রাজমিস্ত্রীর জোগালি ও মাটির কাজ করত। উপার্জনের কিছু অংশ পরিবারকে দিয়ে বাকিটা ব্যয় করত নিজের লেখাপড়ায়। শিক্ষকরা তার অনুপস্থিতিতে রাগ করলেও কখনো বলেনি শ্রমের গল্প। এভাবেই ঘাম ঝরিয়ে স্বপ্ন বুনেছে সে।
সালমান জানায়, নবম শ্রেণিতে পড়ার সময় ফরম পূরণের টাকার চিন্তায় ভেঙে পড়েছিল। তখন এক বছরের জন্য বাইরে কাজ করে কিছু টাকা জমানো হয়। পরে শিক্ষকদের সহযোগিতায় আবার পড়াশোনায় ফিরে আসে।
সালমান বলেন, 'এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পর এবার এইচএসসিতেও জিপিএ-৫ পেয়েছি। স্বপ্ন চিকিৎসক হওয়ার, তবে আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাই।'
সালমানের মা দুলালী বেগম জানান, ছেলের ভর্তি খরচ জোগাতে খড় বিক্রি, এনজিও থেকে ঋণ আর একমাত্র গরুটি বিক্রি করে জমি বন্দক দিয়েছেন তারা।
ভাই দুলু মিয়া বলেন, “আমি পড়াশোনা চালাতে পারিনি, তাই ভাই যেন পারে সেই চেষ্টাই করছি। তবে সহৃদয় মানুষদের সহযোগিতা পেলে ওর পথ সহজ হবে।”
বাবা আবেদ আলী কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “বয়স হয়েছে, কাজ করতে পারি না। এখন যা ছিল সব শেষ। কেউ সহযোগিতা করলে ছেলেটা বড় কিছু করতে পারবে।”
শাহবাজার এ.এইচ. ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম মিয়া জানান, সালমান ফারসী গত বছর এসএসসিতে ও এবার এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে প্রতিষ্ঠানকে গর্বিত করেছে।
তিনি বলেন, 'দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে যে সাফল্য সে অর্জন করেছে, তা অনুপ্রেরণার। সরকারের পাশাপাশি বৃত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত এই মেধাবী শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ গড়তে।'
আতিকুর রহমান/এমটি



























