ভারতীয় আমদানিতে বেড়েছে সরবরাহ, কমেছে চালের দাম
ভারত থেকে চাল আমদানির ফলে দেশের বাজারে সরবরাহ বেড়ে গেছে, যার প্রভাব পড়েছে পাইকারি পর্যায়ের দামে। গত দুই সপ্তাহে প্রায় সব ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মিনিকেট সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে বস্তাপ্রতি ২ হাজার ৮০০ টাকায়, যা আগে ছিল ২ হাজার ৯০০ টাকা। পাইজাম সিদ্ধ এখন ২ হাজার ৭০০ টাকায়, যা আগের তুলনায় ২০০ টাকা কম। কাটারিভোগ সিদ্ধ ১ হাজার ৭০০ টাকায় ও আতপ ৩ হাজার ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুটোরই দাম কমেছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।
এ ছাড়া মিনিকেট আতপ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৫০ টাকায়, নাজিরশাইল সিদ্ধ ২ হাজার, স্বর্ণা সিদ্ধ ২ হাজার ৪০০, বেতী আতপ ২ হাজার ২৫০ এবং মোটা সিদ্ধ ২ হাজার ১৫০ টাকায়। সব ক্ষেত্রেই মানভেদে বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ৩০০ টাকা কমেছে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, গত এক মাসে সরু চালের দাম কমেছে ১ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং মাঝারি মানের চালের দাম কমেছে ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতীয় চালের প্রবাহ বাড়ায় সরবরাহ বেড়েছে, ফলে দামও কমেছে। তবে ভোক্তারা অভিযোগ করেছেন, পাইকারি পর্যায়ে দাম কমলেও খুচরা বাজারে তার প্রভাব এখনও স্পষ্ট নয়।
খাদ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে দেশে মোট ১৩ লাখ টন চাল আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে সরকারিভাবে ৮ লাখ ৩৫ হাজার টন এবং বেসরকারিভাবে প্রায় ৪ লাখ ৭০ হাজার টন। সরকারিভাবে আমদানি হওয়া চালের মধ্যে ৬ লাখ টন এসেছে ভারত থেকে, ১ লাখ টন মিয়ানমার থেকে, ১ লাখ টন ভিয়েতনাম থেকে এবং বাকিটা পাকিস্তান থেকে। বেসরকারি আমদানির বড় অংশও ভারতীয় চাল।
বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার নতুন করে ভারত থেকে আরও ৫০ হাজার টন চাল আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২১৯ কোটি ৯ লাখ টাকা, যেখানে প্রতি টনের দাম ৩৫৯ দশমিক ৭৭ ডলার। একইসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানি করা হবে সরকার-টু-সরকার (জি-টু-জি) পদ্ধতিতে, প্রতি টনের দাম ৩০৮ ডলার।
গত ৮ অক্টোবর সচিবালয়ে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এসব প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়া চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে মোট ৪ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদনও দিয়েছে সরকার।
চট্টগ্রামের পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস. এম. নিজাম উদ্দিন বলেন, বাজারে প্রচুর ভারতীয় চাল এসেছে, ফলে দাম কমছে। দেশীয় চালেরও পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আগামী দুই মাস পর কৃষকের ঘরে আমন ধান উঠলে সরবরাহ আরও বাড়বে, এতে দাম আরও কমতে পারে।
চট্টগ্রাম রাইস মিল মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোহাম্মদ হোসেন জানান, ভারতীয় চালের প্রবাহ বাড়ায় দেশীয় চালের চাহিদা কিছুটা কমেছে। আগে কিছু বড় গ্রুপ বাজার নিয়ন্ত্রণ করলেও এখন যে কেউ চাল আমদানি করতে পারছেন। এতে প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাজারদরে।



























