বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

|১৩ কার্তিক ১৪৩২

শীর্ষ সংবাদ:

‘একবিংশ শতাব্দীতে হাসিনার মতো বড় খুনি কেউ নেই’
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শেখ পরিবার নাও থাকতে পারে, রয়টার্সের সাক্ষাৎকারে হাসিনা
ইমাম-খতিব হচ্ছেন সমাজের জ্ঞানী-প্রজ্ঞাবান মানুষ : এ্যানি
দক্ষিণ কোরিয়ায় ট্রাম্প! পরীক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করলো উত্তর কোরিয়া
ট্রলারাসহ ৭ জেলেকে ধরে নিয়ে গেল আরাকান আর্মি
জ্যামাইকা লন্ডভন্ড করে কিউবার দিকে হারিকেন মেলিসা
নোট অব ডিসেন্ট উপেক্ষা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা: মির্জা ফখরুল
ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে যমুনায় উচ্চপর্যায়ের বৈঠক
এনসিপির নেতৃত্বে গণঅধিকার পরিষদের জোটের সংবাদটি শতভাগ মিথ্যা: রাশেদ খাঁন
যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে ফের ইসরায়েলি হামলা, নিহত ৩৭

সদ্য সংবাদ অনলাইন

প্রকাশিত: ২১:৪০, ২৯ অক্টোবর ২০২৫

আপডেট: ১০:২২, ৩০ অক্টোবর ২০২৫

দেশে ফিরতে যেসব শর্ত দিলেন পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

দেশে ফিরতে যেসব শর্ত দিলেন পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
ছবি: সংগৃহীত

আগামী বছরের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্তের তীব্র সমালোচনা করেছেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দিল্লিতে নির্বাসিত অবস্থান থেকে রয়টার্সকে দেওয়া ই-মেইল সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা শুধু অন্যায় নয়, আত্মঘাতী সিদ্ধান্তও বটে। কোটি কোটি মানুষ আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে- তাদের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে কোনো বৈধ রাজনৈতিক ব্যবস্থা টিকে থাকতে পারে না।’

৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনা ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্রনেতৃত্বাধীন গণঅভ্যুত্থানের পর ভারতে আশ্রয় নেন। বর্তমানে নোবেল শান্তি পুরস্কারজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশ পরিচালনা করছে। এই সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে সরকার সংবিধানবহির্ভূত উপায়ে ক্ষমতায় এসেছে, তার অধীনে আমি দেশে ফিরব না।’ তিনি আরও জানান, ভারতের দিল্লিতে তিনি এখন নিরাপদে থাকলেও অতীত অভিজ্ঞতার কারণে সতর্ক রয়েছেন। ১৯৭৫ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে তাঁর বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্য নিহত হন।

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন গত মে মাসে আওয়ামী লীগের নিবন্ধন স্থগিত করে। এর আগে ড. ইউনূস সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা দেয়, নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ এবং দলটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের তদন্তের কথা উল্লেখ করে। ফলে ১২ কোটি ৬০ লাখ নিবন্ধিত ভোটারের দেশের রাজনীতিতে এখন বিএনপি প্রাধান্য পেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

হাসিনা বলেন, ‘আমরা অন্য কোনো দলকে সমর্থন দিতে বলিনি। আমরা এখনো আশাবাদী যে বিবেক জাগ্রত হবে এবং আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে।’

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সম্প্রতি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা শেষ করেছে। অভিযোগ- ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র আন্দোলনে নিরাপত্তা বাহিনীর সহিংস দমন অভিযানে অন্তত ১,৪০০ জন নিহত ও হাজারো মানুষ আহত হয়। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়, এই ঘটনা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশের সবচেয়ে ভয়াবহ রক্তপাত।

প্রসিকিউশন পক্ষের অভিযোগ, শেখ হাসিনা গোপন আটককেন্দ্রের মাধ্যমে বিরোধী কর্মীদের গুম ও নির্যাতনের দায় এড়াতে পারেন না। আগামী ১৩ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। তবে শেখ হাসিনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার নাটক। রায় আগেই নির্ধারিত আদালতগুলো কাংগারু কোর্টে পরিণত হয়েছে।’

যদিও বর্তমানে ক্ষমতাচ্যুত, শেখ হাসিনা বলেছেন আওয়ামী লীগ একদিন পুনরায় দেশের রাজনীতিতে ভূমিকা রাখবে- সরকারে হোক বা বিরোধী দলে। নিজের পরিবারের ভূমিকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কোনো এক ব্যক্তি বা পরিবারের হাতে নয়। সংবিধান ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাই আমাদের অগ্রগতির চাবিকাঠি।’

শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন, গত বছর রয়টার্সকে বলেন, প্রয়োজনে তিনি দলের নেতৃত্ব নিতে পারেন। তবে হাসিনা নিজে বলেন, ‘এটি ব্যক্তি বা পরিবারের প্রশ্ন নয় জাতির ভবিষ্যতের প্রশ্ন।’

দিল্লির ঐতিহাসিক লোধি গার্ডেনে সম্প্রতি তাঁকে হেঁটে বেড়াতে দেখা যায়, সঙ্গে ছিল দুইজন ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী। তিনি বলেন, ‘আমি অবশ্যই দেশে ফিরতে চাই, যদি বৈধ সরকার, সংবিধান ও আইনের শাসন সত্যিকারের প্রতিষ্ঠিত হয়।’

হাসিনার দেশত্যাগের পর আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওপর সহিংসতা দেখা দিলেও বর্তমানে পরিস্থিতি তুলনামূলক শান্ত। তবে চলতি মাসের শুরুর দিকে রাষ্ট্র সংস্কার সনদে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে নতুন করে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও অনিশ্চয়তা ঘনীভূত হচ্ছে- একদিকে নির্বাসনে থাকা শেখ হাসিনা, অন্যদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত ড. ইউনূস সরকার। আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের ফলাফলই হয়তো নির্ধারণ করবে, বাংলাদেশ কোন পথে এগোবে।
 

সর্বশেষ