প্রয়োজন শেষে রূপ বদলালেন অধ্যাপক ড. ইউনূস: জিল্লুর রহমান

রাজনৈতিক বিশ্লেষক জিল্লুর রহমান বলেছেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের সামনে থাকা তরুণদের দাবি ছিল জুলাই সনদ।’ তিনি বলেন, সেই দাবি নিয়ে এক বছর ধরে আলোচনা চললেও সনদ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তারা অনুপস্থিত ছিলেন এবং শেষ মুহূর্তে তাদের ছাড়া সনদে স্বাক্ষর হয়েছে।
রবিবার (১৯ অক্টোবর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এসব মন্তব্য করেন জিল্লুর রহমান। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ১৭ অক্টোবর ঢাকার জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে সাউথ প্লাজায় জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বৃষ্টি ভেজা দিনে সেখানে ২৪টি রাজনৈতিক দল সনদে স্বাক্ষর করে; পরে গণফোরাম যোগ করলে সংখ্যা দাঁড়ায় ২৫-এ। অর্থাৎ মোট ৫৫টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে অর্ধেকেরও কম এই সনদে স্বাক্ষর করেছে এই বিষয়টিই তিনি প্রশ্নবিদ্ধ বলে অভিহিত করেছেন।
জিল্লুর বলেন, ‘বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জামায়াত বা এনসিপি কেউই নিজে থেকে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে বললে চলে না; জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে হলে ম্যান্ডেট থাকা প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ৫৫ দলের মধ্যে মাত্র ২৫ দলের স্বাক্ষরকে কীভাবে ‘জাতীয় ঐক্যমত্য’ বলা যাবে এটি বিবেচ্য প্রশ্ন।
তিনি আরও মন্তব্য করেন যে, যার দ্বারা স্বাক্ষর করা হলো সেই কলম ‘জাদুঘরে’ যাবে এবং ভবিষ্যতে পাঠ্যপুস্তকে এই চার্টার স্বাক্ষর ও তার আগে হওয়া সংলাপই উল্লেখ করা হবে। তবুও এই ধরণের কথাবার্তা দিয়ে সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে না অর্ধেকের বেশি মানুষকে বাইরে রেখে ঐকমত্য কিভাবে আসবে, সেটাই বড় প্রশ্ন, যোগ করেন তিনি।
জিল্লুর বিশেষভাবে নারী, আদিবাসী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্বের অভাবেরও কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ নারী; তবু আলোচনায় স্বল্পসংখ্যক নারী দেখেছেন হাতে গোনা এক-দুইজন। আদিবাসী বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের সমানভাবে প্রতিনিধিত্ব দেখা যায়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টের উদাহরণ দিয়ে জিল্লুর বলেন, হাসনাত আব্দুল্লাহর দেওয়া দুটি ছবিই ঘটনার সারমর্ম বোঝায় একটিতে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ‘জুলাই যোদ্ধারা’, অন্যটিতে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা এবং রাজনৈতিক নেতারা, কিন্তু তারা নেই। এই ভিন্ন মঞ্চ-রূপ থেকে তিনি বোঝাতে চান, প্রয়োজন হলে কাউকে ব্যবহার করা হয়, পরে ছেড়ে দেয়া হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘যে কলম দিয়ে স্বাক্ষর করা হয়েছে, সেই কলম নাকি জাদুঘরে থাকবে পৃথিবীর মানুষ এখান থেকে শিক্ষা নেবে।’ এছাড়া পরিচালিত সংলাপে নাগরিক কমিটি ও তরুণদের অংশগ্রহণ উল্লেখ করে তিনি কণা-সংকটে পড়ার অনুরোধ তুলেছেন যখন তরুণদের নিয়ে বহু আলোচনা করা হয়েছে, তখনই শেষ মুহূর্তে তাদেরকে বাদ দিলেন কেন, সে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
জিল্লুর নাহিদ ও তার দলের অনাটনাকেও প্রশংসা করেন; বলেন, নাহিদের কয়েকবার না যাওয়ার চেষ্টাকে তিনি স্বীকৃতি দিয়েছেন। পাশাপাশি অন্যান্য দলগুলোর প্রতি কিছু সমালোচনাও রেখেছেন, তবে এনসিপি এবং নাহিদের দলকে তিনি রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ হিসেবে ইতিবাচক মনোনীত করেছেন।