বাংলাদেশিসহ বিদেশি নাগরিকরা বিহারের ভোটার তালিকায়
ভারতের নির্বাচন কমিশনের সূত্রমতে, বিহার রাজ্যের ভোটার তালিকায় বাংলাদেশ, নেপাল ও মিয়ানমারের নাগরিকদের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পিটিআই ও এএনআই সংবাদ সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে। খবর! বিবিস বাংলা।
চলতি বছরের শেষ দিকে বিহারে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তার আগে চলছে ভোটার তালিকার ‘বিশেষ নিবিড় সংশোধন’ প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়ায় বিরোধী দলগুলোর তীব্র আপত্তি রয়েছে এবং বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা চলমান।
ভোটার তালিকার এই সংশোধনে নিযুক্ত বুথ স্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা বিপুলসংখ্যক এমন ভোটার পেয়েছেন যারা আসলে বাংলাদেশ, নেপাল ও মিয়ানমারের নাগরিক। এসব বিদেশিদের কাছে রয়েছে আধার কার্ড, ডোমিসাইল সার্টিফিকেট ও রেশন কার্ড।
রাষ্ট্রীয় জনতা দলের নেতা তেজস্বী যাদব এই প্রক্রিয়াকে ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘কমিশন বলছে তারা সূত্র থেকে তথ্য পেয়েছে। এটা সূত্র নয়, মূত্র।’ পাটনায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করেন, কমিশন দাবি করলেও বাস্তবে অনেকের ফর্ম জমা নেওয়া হচ্ছে না, কোথাও কোথাও সেই ফর্ম দিয়ে জিলিপি বিক্রি হচ্ছে। তার মতে, যদি এক শতাংশ মানুষও বাদ পড়ে, তবে আট লক্ষ নাগরিক ভোটাধিকার হারাবেন।
রাজ্যসভার সদস্য ও সাবেক কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কপিল সিব্বল এই প্রক্রিয়াকে অসাংবিধানিক বলে মন্তব্য করেছেন। পিটিআইকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের নাগরিকত্ব নির্ধারণের অধিকার নেই, অথচ ব্লক স্তরের কর্মকর্তাদের দিয়ে এই কাজ করানো হচ্ছে। সিব্বালের মতে, এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে, যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠবাদী সরকার গঠন সহজ হয়।
ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বিহারে ২০০৩ সালের পর এই প্রথম এত বড় পরিসরে সংশোধন করা হচ্ছে। রাজ্যজুড়ে প্রায় ৭৮ হাজার বুথ কর্মকর্তা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নথি যাচাই করছেন।
আগস্ট মাসজুড়ে চলবে তদন্ত, এবং ৩০ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশিত হবে। ভোটার হিসেবে যোগ্যতা প্রমাণে নির্ধারিত ১১টি নথির যেকোনো একটি জমা দিতে বলা হয়েছে, তবে জন্মসাল অনুযায়ী নথির ধরন ভিন্ন।
কিন্তু বাস্তবে এই সব নথি অনেক মানুষের কাছে নেই। ভারত জোড়ো অভিযানের জাতীয় সমন্বয়ক কামায়নী সোয়ামী জানান, একটি ছোট পরিসরের জরিপে দেখা গেছে, আটটি জেলার ৬৩ শতাংশ মানুষেরই প্রয়োজনীয় নথি নেই। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নারী ও দরিদ্রদের পক্ষে ফর্ম পূরণ করাও কঠিন।
বিহারের নানা এলাকায় ঘুরে বিবিসির সংবাদদাতা সিটু তিওয়ারী জানান, পাটনার একটি বস্তিতে আধার কার্ড গ্রহণ করা হচ্ছে, যদিও তা নির্ধারিত ১১টি নথির তালিকায় নেই। কমিশনের নিজের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যের অধিকাংশ মানুষের কাছেই এই নথি নেই। জাতিগত জরিপ অনুযায়ী মাত্র ১৪ শতাংশ মানুষ দশম শ্রেণি পাস করেছেন এবং ৬০ শতাংশেরও কমের পাকা বাড়ি রয়েছে। এছাড়া, ২১ শতাংশ ভোটার রাজ্যের বাইরে বসবাস করেন, ফলে তাদের পক্ষে নথি জোগাড় করা কঠিন।
বিরোধীরা আশঙ্কা করছে, এটি আসলে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) চালুর একটি ঘুরপথ। এর আগে এনআরসি চালু হয়েছিল কেবল আসামে, যেখানে ১৯ লাখ মানুষ ভোটাধিকার হারান, যাদের অধিকাংশই হিন্দু। তবে আসাম সরকার সেই তালিকা স্বীকার করেনি।
বিজেপি নির্বাচন কমিশনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা বলছে, শুধুমাত্র বিহারিরাই রাজ্যের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবেন, বিদেশি নাগরিকরা নয়। দলটির মুখপাত্র শাহনাওয়াজ হুসেইন জানান, বৈধ ভোটারদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না, সমস্যায় পড়ছে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীরা। আরেক মুখপাত্র শেহজাদ পুণাওয়ালা কংগ্রেস ও রাষ্ট্রীয় জনতা দলকে অভিযুক্ত করে বলেন, তারা শাসনকালে বিদেশি অনুপ্রবেশকারীদের বসতি স্থাপন করিয়ে নানা পরিচয়পত্র দিয়েছিল। এখন তাদের চিহ্নিত করে বাদ দেওয়া হচ্ছে।
বিজেপি সংসদ সদস্য সঞ্জয় জয়সওয়াল বলেন, কিছু জেলায় ভোটারের সংখ্যা আধার কার্ডধারীর সংখ্যার চেয়েও বেশি। তার মতে, সমস্যাটি শুধুই বাইরের নাগরিকদের জন্য; বিহারিদের কোনো অসুবিধা নেই।



























