সাইবার বুলিংয়ের প্রতিকারের দাবিতে ইবি শিক্ষার্থীরা
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মানহানিকর কনটেন্ট প্রচারের প্রতিকারেে আবেদন করেছে শিক্ষার্থীরা। স্ট্যান্ড এগেইনস্ট সাইবার বুলিং (SAC) প্রজেক্টের প্যাডে এ আবেদন দেয়া হয়।
রবিবার (১৬ নভেম্বর) বেলা ১২ টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম ও রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল হককে এ আবেদন পত্র দেন শিক্ষার্থীরা।
আবেদনে বলা হয়, বিগত এক বছর ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (ফেসবুকে) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের নিয়ে মনগড়া, মানহানিকর ও সংবেদনশীল তথ্য, যেমন: ছবি, লেখনী ও ভিডিও-ছড়ানো হচ্ছে। এসব ছবি বা ভিডিও অনেক সময় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে তৈরি, আবার অনেক ক্ষেত্রে সম্পাদিত (edited) বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মানহানিকর লেখনীর মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, এইসব কর্মকাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যেও নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি হচ্ছে। ইতোমধ্যে আমরা ব্যাপারটির বিভিন্ন প্রমাণ সংগ্রহ করেছি এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি দাখিল করেছি। কিন্তু এরপরও এধরনের মানহানিকর কার্যক্রম তথা সাইবার বুলিংয়ের পরিমাণ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এসময় তারা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি এন্টি-সাইবার বুলিং কমিটি গঠন করে সচেতনতা সৃষ্টি, পোস্টারিং, কর্মশালা এবং আইনবিষয়ক প্রচারণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়-সম্প্রদায়কে অবহিত করার জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করার দাবি জানান।
প্রসঙ্গত, এ বিষয়ে গত ৯ নভেম্বর ইবির ইংরেজি বিভাগের ২০২২-২০২৩ শিক্ষাবর্ষেে শিক্ষার্থী রিদয় আহম্মেদ ইবি থানায় একটি সাধারাণ ডায়েরি (জিডি) করেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন, গত ৩ নভেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক পেইজ যাহার নাম IU Crush and Confession থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গ আমাকে সামাজিক ভাবে হেয়পতিপন্ন করার উদ্দেশ্য বিভ্রান্ত মূলক ছবি প্রকাশ করে। যাহা আমার অনুমতি ব্যতিরেখেয় আমাদের ছবি প্রকাশ করেছে।
উল্লেখ্য, পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় তথ্য ও উপাত্ত সংগ্রহ করা সম্ভব হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণপূর্বক মামলা দায়ের করা হবে। সুতরাং, ঘটনার প্রকৃত তদন্ত ও ভবিষ্যতে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের সুবিধার্থে বিষয়টি সাধারণ ডায়েরিভুক্ত করা একান্ত প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, উপরোক্ত বিষয়টি ভবিষ্যতের জন্য সাধারন ডাইরীভূক্ত করিয়া রাখা একান্ত প্রয়োজন।
SAC এর আবেদনপত্রের সাথে তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবরও একই বিষয়ে দুটি পৃথক অভিযোগত্র জমা দেন। সেখানে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী অসমিকা ইসলাম ও ইংরেজি বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. হৃদয় আহমেদ উক্ত ঘটনায় তাদের মর্যাদা ও ব্যক্তিগত সম্মানহানির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বিধিমালা, তথ্য-প্রযুক্তি আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের অভিযোগ করেন। এতে তারা মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়েছে বলে জানান। তাই তারা বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করার অনুরোধ করেন।
এবিষয়ে SAC- AStandsgainst Cyberbulling এর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি ইশতিয়াক ফেরদৌস ইমন বলেন, আমরা মূলত সাইবার হারমোনি নিয়ে কাজ করছি। সাইবার বুলিঙের কারণে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের অসংখ্য শিক্ষার্থী মানসিক বিপর্যস্ত। এই সাইবার বুলিং দিন দিন বেড়েউ যাচ্ছে। এই সাইবার বুলিঙ যারা করছে তারা মূলত না বুঝেই এসব করছে, আমরা চাই কর্মশালা, এবং সচেতনা বৃদ্ধির মাধ্যমে যাতে এই সাইবার বুলিঙ কমানো যায়। পাশাপাশি এন্টি সাইবার বুলিঙ কমিটি গঠন এখন সময়ে দাবি আমাদের। আমরা প্রশাসনের কাছে প্রতি মাসে আমরা অভিযোগ চালাবো। আমরা প্রায় ১০ টি পেইজের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছি এবং অসংখ্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে সম্মিলিত অভিযোভ প্রমাণসহ করেছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ছাত্রদের এ দাবির সাথে আমিও নিঃসন্দেহে একমত। মত প্রকাশের স্বাধীনতার অবশ্যই দরকার আছে। কিন্তু তা করতে গিয়ে যেন অন্য কারোর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে না হয় সে বিষয়েও নিশ্চিত হওয়া দরকার। আমরা এর জন্য যা যা দরকার তা করবো।
এস. এম. শাহরীয়ার স্বাধীন/এমটি



























