শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু রোববার

জুলাই গণঅভ্যুত্থনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রোববার (৪ আগস্ট) থেকে বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। এদিন রাষ্ট্রপক্ষ সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করবে এবং প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ট্রাইব্যুনালের অনুমতি সাপেক্ষে বিচারকাজ সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
শনিবার (২ আগস্ট) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার প্রসিকিউটর গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম।
এই মামলার অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। মামুন ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত থেকে রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন করেন, যা ট্রাইব্যুনাল অনুমোদন করেছে। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান পলাতক থাকায় তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স) আমির হোসেন দায়িত্ব পালন করছেন। মামুনের পক্ষে আছেন আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ।
গত ১০ জুলাই ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (চার্জ) গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেয়। একই সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষকে সূচনা বক্তব্যের জন্য ৩ আগস্ট এবং সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৪ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়। মামলায় সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা ও একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকসহ মোট ৮১ জন।
গত বছর আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ১৪ আগস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ জমা পড়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। অভিযোগে বলা হয়, গণঅভ্যুত্থনের সময় দেড় হাজারের বেশি মানুষ হত্যায় উসকানি, প্ররোচনা, নির্দেশনা প্রদান এবং ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ ও ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ’-এর আওতায় তিনি দায়ী। প্রসিকিউশন আদালতে শেখ হাসিনার একটি অডিও রেকর্ডসহ প্রমাণও উপস্থাপন করেছে। পরে প্রসিকিউশনই শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। সেই মামলায় ট্রাইব্যুনাল ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে।
অভিযোগ দাখিলের ৬ মাস ২৮ দিন পর, ২০২৪ সালের ১২ মে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের কাছে জমা দেয় তদন্ত সংস্থা। এরপর ১ জুন ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় এবং পলাতকদের বিরুদ্ধে পুনরায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। শেখ হাসিনা ও কামাল হাজির না হওয়ায় বিচার তাদের অনুপস্থিতিতেই শুরু হচ্ছে।
এই প্রথম জুলাই গণঅভ্যুত্থনের কোনো মামলায় বিচার কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, যা রাজনৈতিক সহিংসতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের আন্তর্জাতিক মানের বিচার হিসেবে ইতিহাসে স্থান পেতে যাচ্ছে।