শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

|৭ কার্তিক ১৪৩২

রাঙামাটি প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৪:১৪, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

পাহাড়ে ধর্ষণ ইস্যুকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানোর প্রতিবাদ পিসিসিপির

পাহাড়ে ধর্ষণ ইস্যুকে রাজনৈতিক হাতিয়ার বানানোর প্রতিবাদ পিসিসিপির
ছবি: সদ্য সংবাদ

পার্বত্য চট্টগ্রামে ধর্ষণ ইস্যুকে সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদ (পিসিসিপি)।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকালে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিষয়টি জানিয়েছে পিসিসিপি।

বিবৃতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র পরিষদের (পিসিসিপি) কেন্দ্রীয় সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন কায়েস ও সাধারণ সম্পাদক মো. হাবীব আজম বলেন, 'পাহাড়ে যে কোনো ধর্ষণ বা নারী নির্যাতনের ঘটনা অপরাধ হিসেবেই দেখা উচিত। কোনোভাবেই জাতিগত বা রাজনৈতিক দৃষ্টিতে নয়।'

বিবৃতিতে তারা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম একটি বহু-জাতিগোষ্ঠীর অঞ্চল, যেখানে বাঙালি ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে পাশাপাশি বসবাস করছে। এই সমাজে অপরাধ ঘটতেই পারে, কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো—যখন কোনো উপজাতি নারী ও বাঙালি পুরুষ জড়িত থাকে, তখন ঘটনার তদন্ত বা প্রমাণের আগেই কিছু আঞ্চলিক সংগঠন ও ব্যক্তি সেটিকে ‘জাতিগত নিপীড়ন’ বা ‘দমননীতি’ বলে প্রচার শুরু করে। এতে শুধু বিভাজনই বাড়ে না, পাহাড়ে অস্থিরতাও সৃষ্টি হয়।

পিসিসিপি অভিযোগ করে, কিছু আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন ও অধিকারকর্মী যেমন—জেএসএস, ইউপিডিএফ, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশনসহ কয়েকজন ব্যক্তি (ইয়েন ইয়েন, মাইকেল চাকমা, দেবাশীষ রায়, ডা. মংসানু মারমা প্রমুখ) এ ধরনের ঘটনাকে ইচ্ছাকৃতভাবে রাজনৈতিক ইস্যু বানিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেন। অথচ, যখন উপজাতি নারীরা নিজ সম্প্রদায়ের পুরুষদের হাতে ধর্ষিত হন, তখন এসব সংগঠন ও ব্যক্তি চুপ থাকেন। স্থানীয় পর্যায়ে অনেক সময় টাকার বিনিময়ে ‘প্রথাগত বিচার’ নামের মীমাংসা করে ঘটনাগুলো গোপন করা হয়।

পিসিসিপির নেতারা জানান, গত এক দশকে পার্বত্য চট্টগ্রামে সংঘটিত ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের প্রায় অর্ধেক ঘটনাই উপজাতি সমাজের অভ্যন্তরে ঘটেছে। তবে এসব ঘটনার খুব সামান্য অংশ আদালতে পৌঁছায়। মানবাধিকার কমিশনের আঞ্চলিক প্রতিবেদন ও বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী (জনকণ্ঠ ২০২২, বাংলাদেশ প্রতিদিন ২০২১), ২০১৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত অন্তত ৩৫টির বেশি উপজাতি-উপজাতি ধর্ষণ ঘটনা স্থানীয়ভাবে মীমাংসা করা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কিছু চরমপন্থী আঞ্চলিক সংগঠন সচেতনভাবে ধর্ষণের ঘটনাকে ‘জাতিগত নিপীড়ন’ আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক সহানুভূতি আদায় ও স্বায়ত্তশাসনের দাবিকে জোরদার করতে চায়। অথচ সংবিধান ও আইনের দৃষ্টিতে ধর্ষণ একটি জাতিহীন অপরাধ—এখানে অপরাধীর জাতি নয়, প্রমাণই মুখ্য হওয়া উচিত।

পিসিসিপি সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর উদাহরণ টেনে বলে, ক’দিন আগে খাগড়াছড়িতে মিথ্যা ধর্ষণের ইস্যুতে সহিংসতা ছড়িয়ে সেনাবাহিনীর ওপর ও বাঙালিদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক হামলা চালানো হয়। কিন্তু রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে প্রতিবন্ধী মারমা কিশোরীকে উপজাতি তিন মারমা যুবক মিলে ধর্ষণ করে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা করে তোলার ঘটনায় কিংবা খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় মন্দিরে এক উপজাতি নারীকে চার ত্রিপুরা যুবকের গণধর্ষণের ঘটনায় তথাকথিত অধিকারকর্মীদের নীরবতা চোখে পড়ে।

সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রশ্ন তোলেন, 'পাহাড়ের এই ধর্ষণ ঘটনাগুলো নিয়ে এখন কোথায় সেই প্রতিবাদকারীরা? নাকি শুধুমাত্র বিশেষ স্বার্থে কিছু ধর্ষণের ইস্যু সামনে আনা হয়?'

বিবৃতিতে বলা হয়, ধর্ষণকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে পাহাড়কে অস্থিতিশীল করার প্রচেষ্টা বন্ধ করতে হবে। নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের মতো সংবেদনশীল বিষয় নিয়ে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ায় যারা জড়িত, তাদের সামাজিকভাবে বয়কট ও আইনের আওতায় আনার দাবি জানায় পিসিসিপি।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, ধর্ষণ একটি সামাজিক অপরাধ—কোনো জাতিগত সংঘাত নয়। বাঙালি অপরাধী হলে যেমন বিচার চাই, উপজাতি অপরাধী হলেও একইভাবে বিচার চাই, এটাই ন্যায়বিচারের মানদণ্ড। তারা আহ্বান জানান, 'ধর্ষণ নয়, অপরাধীর বিচার' নীতি মেনে পার্বত্য চট্টগ্রামে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

মো. নাজমুল হোসেন ইমন/এমটি