বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫

|১৪ আশ্বিন ১৪৩২

শরীয়তপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২০:৫১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আপডেট: ২০:৫১, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

‘মাইয়ার তো লাশ পাইছোস, পোলার লাশ খুঁজে পাবি না’

‘মাইয়ার তো লাশ পাইছোস, পোলার লাশ খুঁজে পাবি না’
ছবি: সংগৃহীত

ছয় বছরের শিশু তাইয়েবা হারানোর পরও পরিবারের ভয়-উৎকন্ঠা থামছে না। থানায় মামলা তুলে নিতে ও নীরবতা বজায় রাখার জন্য বাদী পরিবারকে দফায় দফায় হুমকি দেওয়া হচ্ছে। মামলার প্রধান আসামি বলে পুলিশ অভিযুক্ত করে থাকা আয়েশা বেগমের পরিবারের লোকজন নিহতের পরিবারকে ভয় দেখাচ্ছে—এ কথা জানান নিহতের পরিবার ও প্রতিবেশিরা। সোমবার সকালে তাইয়েবার মা ডলি আক্তার এসব অভিযোগ তুলেছেন।

তাইয়েবা টিটু সরদারের মেয়ে। তিনি ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানাধীন ছৈয়ালকান্দি গ্রামের দারুণ নাজাত মাদ্রাসার নার্সারির ছাত্রী ছিলেন। গত বুধবার ওই স্কুলছাত্রী নিখোঁজ হন। বহু খোঁজাখুঁজির পর শুক্রবার প্রতিবেশী মেসবাহউদ্দীন মোল্লার বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত সূত্রে পুলিশ বলছে—পারিবারিক বিবাদ ও শত্রুতার জেরে অভিযোগভিত্তিক সন্দেহ করা হচ্ছে আয়েশা বেগমই শিশুটিকে হত্যা করেছেন। পুলিশ ঘটনার পর টিটু সরদারের বাদী হওয়া মামলায় চাচি আয়েশা বেগম, প্রতিবেশী নাসিমা ও রংমিস্ত্রি আসিফকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। আদালত আয়েশা বেগমের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

অপরদিকে নিহতের পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, রোববার সকালে বাড়িতে এসে মামলা তুলে নিতে অভিযোগের প্রধান আসামি আয়েশার স্বামী সাহান সরদার, ছেলে আকিব সরদার, ননদ রিনা ও রুমা তাদের চাপ দিচ্ছেন। অভিযোগ অনুযায়ী আকিব ও রিনা বলেছে—‘মামলা উঠাইয়া না নিলে তোর পোলারে খাইয়া ফালামু; তোর পোলারে শেষ দেখা দেইখা রাখিস। মাইয়ার তো লাশ পাইছোস, পোলার লাশ খুঁজে পাবি না।’ এ ছাড়াও বিচার দাবিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদেরও নানা হুমকি দেয়া হয়েছে বলে পরিবার ও প্রতিবেশীরা জানায়।

ডলি আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমি ন্যায়বিচার চাই। কিন্তু এখন উল্টো আমাকে মামলা তুলে নিতে বলা হচ্ছে এবং বলা হচ্ছে আমার আরেক সন্তানকেও মেরে ফেলবে—আমি দিনরাত আতঙ্কে আছি। প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চাই।’ টিটু সরদারও বলেন, ‘আমরা এখন বাড়ি থেকে বের হতে ভয় পাই। ছেলে অনুভব করছে, স্কুলে ও বাড়ির বাইরে যেতে পারছে না। বিচার চাই—মরে গেলেও মেয়ের হত্যার বিচার চাই।’

বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী শুক্রবার সকালে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন ও পরে সখিপুর থানা ঘেরাও করে আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া দশম শ্রেণীর ছাত্রী লামিয়া জানান, আয়েশার স্বামী সাহান সরদার মানববন্ধনরতদের জানায়—‘মানববন্ধন করলে লাশ মিলবে না।’ তিনি বলেন, ‘তারা ভিডিও করে নিয়েছে, বলেছে কাউকে স্কুলে আসতে দেওয়া হবে না—তবুও আমরা আতঙ্কে থাকি না, তাইয়েবার হত্যার বিচার চাই।’

প্রতিবেশী আবুল কাশেম মিয়া বলেন,‘শিশুহত্যার মতো জঘন্য অপরাধের বিচার না হলে সমাজে ভয়ানক দৃষ্টান্ত তৈরি হবে। যদি বাদীকে এইভাবে হুমকি দেওয়া হয়, তাহলে আর কেউই মামলা করার সাহস পাবে না। প্রশাসন দ্রুত তদন্ত করে ঘটনার মূল আসামিদের গ্রেপ্তার করুক।’ তিনি আরও যোগ করেন, হুমকিদাতাদেরও আইনের আওতায় আনা উচিত।

সখিপুর থানার ওসি মো. ওবায়দুল হক বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডে জড়িত সকল আসামিকে আইনের আওতায় আনা হবে। বাদী পরিবার যদি হুমকির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেয়, পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে। তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার ব্যাপারে পুলিশ প্রস্তুত আছে। হুমকিদাতাদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হবে।’

সর্বশেষ