শুক্রবার, ০৮ আগস্ট ২০২৫

|২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

সদ্য সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:০৭, ৭ জুলাই ২০২৫

আপডেট: ২১:০৭, ৭ জুলাই ২০২৫

দেশের ৭৭ শতাংশ নারী গর্ভধারণের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না

দেশের ৭৭ শতাংশ নারী গর্ভধারণের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না

বাংলাদেশে ৭৭ শতাংশ নারী সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্তে স্বাধীন নন। বিশ্বব্যাপী এই হার ৬৬ শতাংশ। অর্থনৈতিক সংকট, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ঘাটতি এবং সামাজিক চাপ নারীদের প্রজনন স্বাধীনতাকে সীমিত করে তুলেছে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) ‘স্টেট অব ওয়ার্ল্ড পপুলেশন ২০২৫’ প্রতিবেদন এমন চিত্র তুলে ধরেছে।

সোমবার ঢাকার গুলশান-২–এ জাতিসংঘ ভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়। এতে বিশ্বজুড়ে প্রজনন সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ ও নীতিগত জটিলতা তুলে ধরা হয়েছে। ইউএনএফপিএ ১৪টি দেশে প্রায় ১৪ হাজার মানুষের ওপর জরিপ পরিচালনা করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হয়েছে বিডিএইচএস ২০২২-এর তথ্য।

অনুষ্ঠানে ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের প্রতিনিধি ক্যাথরিন ব্রিন কামকং জানান, বর্তমানে বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ তাদের কাঙ্ক্ষিত পরিবার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। ৫০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে ৩১ শতাংশ মনে করেন, তারা কাঙ্ক্ষিত সন্তানের সংখ্যা অর্জন করতে পারেননি। এর পেছনে রয়েছে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, স্বাস্থ্যসেবার অভাব, উপযুক্ত সঙ্গীর সংকট ও ভবিষ্যৎ নিয়ে দ্বিধা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সন্তান না নেওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ অর্থনৈতিক দুরবস্থা (৩৯ শতাংশ)। এছাড়া ২৪ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবার সীমাবদ্ধতা, ২৪ শতাংশ সঙ্গীর অভাব এবং ১৯ শতাংশ ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তাকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন। অনেকেই সন্তান নিতে চেয়েও পারেননি, কেউবা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে মা হয়েছেন—কোনো কোনো নারী উভয় অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েও গিয়েছেন।

বাংলাদেশে পরিস্থিতি আরও উদ্বেগজনক। এখানে ১১ শতাংশ নারী এখনও জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। ২৫ শতাংশ নিজেদের স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে সিদ্ধান্তে স্বাধীন নন এবং ২৪ শতাংশ যৌন সম্পর্কে অসম্মতির অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না। প্রতি তিন নারীর একজন কোনো না কোনো সময় অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণের শিকার হন। কিশোরী মাতৃত্ব ও পরিবার পরিকল্পনার সীমাবদ্ধতা এখনো বড় সমস্যা।

ক্যাথরিন ব্রিন কামকং বলেন, প্রজনন সংকটকে ‘বেশি’ বা ‘কম’ জনসংখ্যার সমস্যায় সীমাবদ্ধ না রেখে স্বাধীনতার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। নারীর সিদ্ধান্তগ্রহণে বাধা যতদিন থাকবে, ততদিন এই সংকট থাকবে। তিনি স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের মাত্র ০.৭ শতাংশ এবং বাজেটের ২ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ যা যথাক্রমে ৫ শতাংশ ও ১৫ শতাংশে উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়। এতে করে প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা, দক্ষ মিডওয়াইফ এবং জীবনরক্ষাকারী ওষুধের সহজ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যাবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালে বিশ্ব জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮.২ বিলিয়নে। বাংলাদেশে এই সংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি ৫৭ লাখ, যার অর্ধেকই নারী। কর্মক্ষম বয়সী মানুষের সংখ্যা প্রায় ১১.৫ কোটি, যা দেশের জন্য ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সম্ভাবনা তৈরি করছে। তবে ৬৫ বছরের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠী প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ, যা বার্ধক্যজনিত চাপের আশঙ্কাও তৈরি করছে।

কিশোর-কিশোরী (১০–১৯ বছর) জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৩ কোটি ৩০ লাখ এবং ১০–২৪ বছর বয়সী তরুণদের সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি। এই বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠী সঠিক সুযোগ ও স্বাধীনতা পেলে দেশের উন্নয়নে বড় অবদান রাখতে পারে।

প্রতিবেদনটি শেষ হয়েছে এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তায় প্রজনন সিদ্ধান্তের স্বাধীনতা কেবল স্বাস্থ্য বা জনসংখ্যা নয়, এটি মর্যাদা, নিরাপত্তা ও ব্যক্তি স্বাধীনতার বিষয়। একটি এমন ভবিষ্যতের আহ্বান জানানো হয়েছে, যেখানে প্রত্যেক মানুষ নিজের জীবনের পরিকল্পনা করতে পারবেন নিজের শর্তে, সমর্থন নিয়ে বিচার নয়।