ঢামেক শিক্ষার্থী নন্দিনীর রহস্যজনক মৃত্যু
মদপান নাকি অন্য কিছু? মুখ খুলছেন না কেউ
ঝিনাইদহে পূজা উদযাপন করতে গিয়ে চাচার শ্বশুরবাড়িতে মদপানের পর মারা গেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মেধাবী ছাত্রী নন্দিনী রানী সরকার (১৮)। রোববার ভোরে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
তবে নন্দিনীর মৃত্যু ঘিরে এখন তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। শুরুতে পরিবার জানায়, তিনি বান্ধবীদের সঙ্গে মদপান করেছিলেন। কিন্তু এখন পরিবার ও আত্মীয়রা কেউই সে বিষয়ে মুখ খুলছেন না। পুলিশ বলছে, নন্দিনীর সঙ্গে কারা ছিল, মদ কে সরবরাহ করেছে, কিংবা অন্যরা মদপান করলেও কেন অসুস্থ হয়নি এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো মেলেনি।
স্থানীয়দের ধারণা, নন্দিনীর সঙ্গে থাকা কয়েকজন নিজেদের জড়িত হওয়ার আশঙ্কায় তার নানাবাড়ির লোকজনকে পুলিশকে কিছু না বলতে চাপ দিচ্ছে। ফলে ঘটনাটির সত্যতা জানতে ওই সময় উপস্থিতদের শনাক্ত ও জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি বলে মনে করছে পুলিশ।
শৈলকুপা থানার ওসি মাছুম খান বলেন, ‘এ ঘটনায় থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। নন্দিনীর মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। তবে তার নানাবাড়ির আত্মীয়রা এখন নতুন কোনো তথ্য দিচ্ছে না। এলাকাবাসীরাও নীরব। নন্দিনীর সঙ্গে যারা মদপান করেছিল, তাদের শনাক্তের চেষ্টা করছি। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নন্দিনীর সঙ্গে অন্য কেউ অসুস্থ হয়নি, এটা আমাদের জন্য প্রশ্ন তৈরি করেছে। এর পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না, তাও আমরা খতিয়ে দেখছি। ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পেলে কোন ধরনের মদপানে তার মৃত্যু হয়েছে, তা স্পষ্ট হবে।’
এদিকে, নন্দিনীর মৃত্যু সংবাদ জানাজানি হওয়ার পর সাংবাদিকরা তার মানিকগঞ্জের গিলন্ড গ্রামে যান। কিন্তু তার বাবা অনিল চন্দ্র সরকার মেয়ের বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি এবং ফোনকলও রিসিভ করেননি।
নন্দিনী এ বছরের জানুয়ারিতে সরকারি-বেসরকারি মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ১৩৩তম স্থান অর্জন করেন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পান। দরিদ্র পরিবারের সন্তান নন্দিনীর স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হয়ে সংসারের হাল ধরা।
তার বাবা অনিল চন্দ্র সরকার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। মেয়ের ভর্তি নিয়ে যখন দুশ্চিন্তায় ছিলেন, তখন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন।
কিন্তু চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নের সূচনালগ্নেই থেমে গেল নন্দিনীর জীবনযাত্রা। এখন তার মৃত্যু ঘিরে নানা প্রশ্নের জবাব খুঁজছে পুলিশ, আর শোক ও নীরবতায় ডুবে আছে পরিবার। সূত্র: যুগান্তর



























