বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫

|১৪ আশ্বিন ১৪৩২

​​​​​​​ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৮:২০, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পুলিশ হেফাজতে যুবকের মৃত্যু, ফাঁড়ির ইনচার্জ গ্রেফতার

পুলিশ হেফাজতে যুবকের মৃত্যু, ফাঁড়ির ইনচার্জ গ্রেফতার
ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে পুলিশ হেফাজতে আব্দুল্লাহ (২৭) নামে এক যুবকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, চোর সন্দেহে তাকে প্রথমে গ্রামবাসী নির্মমভাবে নির্যাতন করে এবং পরে ফাঁড়িতে নিয়ে আরও অমানবিক নির্যাতন চালানো হয়। নিহত আব্দুল্লাহ বাঞ্ছারামপুর উপজেলার তেজখালী ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের আবুল মিয়ার ছেলে।

স্থানীয় সূত্রে জাণা যায়, গত (১৭সেপ্টেম্বর) ছলিমগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়াইল গ্রামে নগদ অর্থ চুরির অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার সূত্র ধরে (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে সলিমগঞ্জ বাজার সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে মাস্ক পরিহিত অবস্থায় আব্দুল্লাহকে আটক করা হয়। স্থানীয় কয়েকজন তাকে মারধর করে বাড়িতে নিয়ে যায় এবং সেখানে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় আব্দুল্লাহকে সলিমগঞ্জ অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়িতে সোপর্দ করা হয়। কিন্তু পরিবার ও স্থানীয়দের অভিযোগ, ফাঁড়িতে নেওয়ার পরও নির্যাতন চলতে থাকে। পরিবারের দাবি, তার হাতের নখ গ্লাস দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়, কপালের চামড়া ছুলে দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নবীনগর থানার ওসি এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে অবগত না করেই তাকে চারদিন ফাঁড়িতে আটকে রাখা হয় এবং বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হয়। অভিযানের সময় বাবু (রাব্বি) ও মাসুদ রানা নামে দুইজনকে গ্রেপ্তার করে জেলা হাজতে পাঠানো হলেও আব্দুল্লাহকে গোপনে ফাঁড়িতেই আটকে রাখা হয়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে প্রথমে তাকে সলিমগঞ্জ অলিউর রহমান জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তিনদিন চিকিৎসা চলার পর অবস্থার অবনতি হলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় (২৮সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় আব্দুল্লাহ'র মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই সাকিল মিয়া বাদী হয়ে (২৯সেপ্টেম্বর) নবীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় ছলিমগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মহিউদ্দিন,তবি মিয়া,আলামিন,আয়নাল হক সহ চারজনের নাম উল্লেখ করে আরও ২০–২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, আসামিরা সম্মিলিতভাবে আব্দুল্লাহকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন এবং পরিকল্পিতভাবে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেন।

আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর স্থানীয় জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে সলিমগঞ্জ ফাঁড়ি ঘেরাও করে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে । উত্তেজনা বাড়তে থাকায় প্রশাসন ফাঁড়িটি বন্ধ করে দেয় এবং সেনা মোতায়েন করে। 

এদিকে ঘটনার পর পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. মহিউদ্দিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। এরপর আজ সোমবার দুপুর ৩টায় সলিমগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো: মহিউদ্দিনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। তবে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেওয়া হয়নি।

নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সর্বশেষ