বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫

|১৪ আশ্বিন ১৪৩২

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১৩:৩২, ১৩ আগস্ট ২০২৫

বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই পদ্মার পানি, প্লাবিত নিম্নাঞ্চল 

বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই পদ্মার পানি, প্লাবিত নিম্নাঞ্চল 
ছবি: সংগৃহীত

ভারী বর্ষণ ও ফারাক্কার বিরূপ প্রভাবে ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানির কারণে কুষ্টিয়ায় পদ্মা ও গড়াই নদীর পানি প্রতিদিনই বাড়ছে। বুধবার (১৩ আগস্ট) পদ্মার পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয় ১২ দশমিক ৮৯ সেন্টিমিটার এবং গড়াই নদীর পানির উচ্চতা ১১ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার মাত্র এক সেন্টিমিটার নিচে। আগস্টের শুরু থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এতে দৌলতপুর উপজেলার অন্তত ৪০-৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। চরের ১৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে। নদীর তীরবর্তী এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে, প্লাবিত হয়েছে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের বহু রাস্তাঘাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নদীপারের বাসিন্দারা বন্যার শঙ্কায় রয়েছেন। ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় গোখাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে, গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চরের মানুষ। অনেকেই বাথান ভেঙে পশু নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন।

জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান জানিয়েছেন, সরকারের পক্ষ থেকে ত্রাণ প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং পানি আরও বাড়তে পারে বলে প্রশাসন সতর্ক রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আবাদি জমি ও রাস্তা ডুবে যাওয়ায় স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে পদ্মার বিপৎসীমা ১৩ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার, বর্তমানে তা মাত্র এক সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। গড়াই নদীর বিপৎসীমা ১২ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার হলেও পানির উচ্চতা এখন ১১ দশমিক ২৭ সেন্টিমিটার।

চিলমারী ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, পদ্মার পানির অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নিচু এলাকার বহু বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়েছে, মরিচ, পাট ও ধানের মতো উঠতি ফসল নষ্ট হয়েছে, রাস্তাঘাটও পানিতে তলিয়ে গেছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মান্নান বলেন, ঘরবাড়ি পুরোপুরি প্লাবিত না হলেও মানুষ দুর্ভোগে আছেন এবং গোখাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিরাজ মন্ডল জানান, নদীর ওপারের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন, আবাদি জমি ডুবে গেছে। প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ জানিয়েছেন, চরের দুই ইউনিয়নের ১৩টি বিদ্যালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়েছে।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল হাই সিদ্দিকী জানান, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ রয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিক সহায়তা দেওয়া হবে।

পাবনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুজ্জামান জাহিদ বলেন, পদ্মা ও গড়াই নদীর পানি প্রতিদিনই বাড়ছে, তবে এ প্রবণতা কতদিন চলবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।

সম্পর্কিত বিষয়:

সর্বশেষ