রোববার, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

|১০ কার্তিক ১৪৩২

শীর্ষ সংবাদ:

জুলাই সনদের আলোকে রাষ্ট্র সংস্কারে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ: উপদেষ্টা আদিলুর
‘নির্বাচনকে সামনে রেখে তত্ত্বাবধায়কের আদলে দেশ পরিচালনা করতে হবে’
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে চাই: মির্জা ফখরুল
জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া দেখেই সই করবে এনসিপি
হযরত শাহজালালের আগুন তদন্ত চার দেশের বিশেষজ্ঞদের আমন্ত্রণ
ঝালকাঠিতে বাইকের পেছনে বাসের ধাক্কা, বিএনপি নেতার মৃত্যু
‘মাদক ছুতো’য় ভেনেজুয়েলা ঘিরে ফেলেছে আমেরিকা, অভিযোগ মাদুরোর
নির্বাচন ঘিরে ইসিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৩৪ প্রস্তাব
সাগরে নিম্নচাপ, পরিণত হতে পারে ঘূর্ণিঝড়ে, নাম হবে মন্থা
‘প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকতে উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া জরুরি’
পাবনায় বাঁশবোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় ভ্যান উল্টে স্কুলশিক্ষার্থীসহ নিহত ৩

সদ্য সংবাদ অনলাইন

প্রকাশিত: ১৯:৪৬, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

কর্তৃত্ব নয়, ভ্রাতৃত্বের মানসিকতায় সেবা দিতে হবে: মুশফিকুল ফজল আনসারী

কর্তৃত্ব নয়, ভ্রাতৃত্বের মানসিকতায় সেবা দিতে হবে: মুশফিকুল ফজল আনসারী
ছবি: সংগৃহীত

মেক্সিকোস্থ বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী আহ্বান জানিয়েছেন,  সেবা দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে জনগণকে আপন করে নেওয়ার । তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘কর্তৃত্ব নয়, ভ্রাতৃত্বের মাধ্যমে সেবা করতে হবে—জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে আপন করে।’

শনিবার (১৮ অক্টোবর) সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত ‘সিলেট বিভাগের বর্তমান শিক্ষা ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে সিলেট জেলা প্রশাসন ও জালালাবাদ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন।

সভায় সভাপতিত্ব করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. সৈয়দ মাসুম আহমেদ চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং জালালাবাদ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু নাসের খান।

রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি গণ-অভ্যুত্থানের পর যত উন্নয়নের কথাই বলা হোক না কেন, যদি মানসিকতার পরিবর্তন না আসে, তাহলে সংকট থেকেই যাবে। আমরা নিজের কাজ না করে অন্যের সমালোচনায় মুখর হয়ে পড়ি—এই মানসিকতা বদলাতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের মনে রাখা উচিত, জনগণের ট্যাক্সের টাকায় তাদের বেতন-ভাতা ও গাড়ি নিশ্চিত হয়। তাই জবাবদিহিতা থাকা জরুরি। আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা মনিবের আসনে নই, জনগণের সেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।’

অধিকর্তৃত্ববাদী প্রশাসনিক মানসিকতা পরিহারের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কর্তৃত্বপরায়ণতা যেন আমাদের গ্রাস না করে। পারস্পরিক সম্মান ও সমঝোতার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সমাজে এখনো এমন ভাবনা বিরাজ করছে—একজন নিজেকে উপরতলার মানুষ মনে করেন, আরেকজন ভাবেন, তার জন্মই হয়েছে সালাম দেওয়ার জন্য। এই বিভাজন ভাঙতে হবে।’

সিলেটের অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবি নিয়ে চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘দেশের বাইরে থেকেও আমি সিলেটের বঞ্চনার কথা শুনেছি। ঢাকায় ফেরার পর বিষয়টি উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। যোগাযোগ উপদেষ্টা জানিয়েছেন, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উন্নয়ন তদারকি বাড়ানো হয়েছে, রেলের নতুন বগির অর্ডার দেওয়া হয়েছে, বিমানের ভাড়া নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখা হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় স্থবির প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে, আর অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ সহায়তা দিতে প্রস্তুত।’

দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক স্থবিরতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রায় ১৭ বছরের একটি শাসনের অবসান ঘটেছে। এ ধরনের শাসনের পতনের পরপরই কিছুটা সমন্বয়হীনতা তৈরি হয়, যা দেশের সার্বিক সেবায় প্রভাব ফেলে। তবে আমি বিশ্বাস করি, কেউ সিলেটের ন্যায্য দাবিকে উপেক্ষা করছে না। যথাযথ সমন্বয় ও যোগাযোগের মাধ্যমে সমস্যাগুলোর সমাধান সম্ভব।’

নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা প্রায়ই দেখি, দায়িত্ব পালন না করে অন্যের ওপর দোষ চাপানোর প্রবণতা বাড়ছে। অথচ নিজেদের প্রশ্ন করা উচিত—আমি কি আমার কাজ সঠিকভাবে করছি?’

সমাজের প্রথাগত বাধা ভেঙে পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজে কিছু প্রথাগত বাধা এখনো টিকে আছে, যা অন্য দেশ অনেক আগেই অতিক্রম করেছে। যদি আমরা ভ্রাতৃত্ববোধ না গড়ে তুলতে পারি, তাহলে পরিবর্তন সম্ভব নয়। সমাজে গঠনমূলক পরিবর্তন আনতেই হবে।’

রাষ্ট্রের দায়িত্বকে সেবার সুযোগ হিসেবে দেখার আহ্বান জানিয়ে মুশফিকুল ফজল বলেন, ‘আমাকে কেউ নির্দিষ্ট লক্ষ্য দেয়নি, তবুও আমি কাজ করছি কীভাবে মেক্সিকোসহ লাতিন আমেরিকায় বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাড়ানো যায়। সেখানে এক বিলিয়ন ডলারের বাজার তৈরির সুযোগ রয়েছে।’

মূল প্রবন্ধে ড. সৈয়দ মাসুম আহমেদ চৌধুরী জানান, ‘সিলেট বিভাগে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার ৩০ শতাংশ, সুনামগঞ্জে তা ৩৪.২৪ শতাংশ। প্রায় ২০ শতাংশ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা বাধাগ্রস্ত।’ তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক ঘাটতির প্রভাব এবারের এইচএসসি ফলাফলে পড়েছে। সরকারি স্কুলে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ১:১৮৫, যা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আরও কম।’

জালালাবাদ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু নাসের খান বলেন, ‘একসময় সিলেট ছিল দেশের শিক্ষার রাজধানী। কিন্তু এখন এই অঞ্চলের বুদ্ধিভিত্তিক নেতৃত্ব কমে যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ ও বিশ্লেষণী দক্ষতা বিকাশের মাধ্যমে এই অবস্থার উন্নতি সম্ভব।’

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. জাবের, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সচিব আব্দুর রহমান তরফদার, জাতীয় বেতন কমিশনের সচিব ফরহাদ সিদ্দিকী এবং সিলেট বিভাগের কমিশনার খান মো. রেজাউন নবী প্রমুখ।

সর্বশেষ