বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন
বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় ’মেলিসা’ আঘাত হানতে যাচ্ছে ’জ্যামাইকা’ উপকূলে
এ বছরের মধ্যে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়টি আঘাত হানতে যাচ্ছে জ্যামাইকা উপকূলে। এখন পর্যন্ত সেখানে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে এত শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানেনি জ্যামাইকা উপকূলে।
যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করেছেন, এই ঘূর্ণিঝড়টি প্রাণঘাতী ও এটি মহা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে দেশটিতে। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৭৫ মাইল বা ২৮২ কিলোমিটার গতিতে হারিকেন মেলিসা এখন ক্যাটাগরি পাঁচ মাত্রার ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। যেটি ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ স্তর। এটি ক্রমান্বয়ে আরও শক্তি সঞ্চয় করছে এবং মঙ্গলবার ভোরের দিকে ক্যারিবীয় দ্বীপ জ্যামাইকায় আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে।
ঝড়ের প্রভাবে জ্যামাইকায় তিনজনের প্রাণহানির পাশাপাশি হাইতি ও ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রেও এখন পর্যন্ত চারজন নিহত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, খুবই ধীর গতিতে উপকূলের দিকে যাচ্ছে ঝড়টি। যে কারণে যে এলাকা দিয়ে ঝড়টি অতিক্রম করবে, সেখানে দীর্ঘ সময় তাণ্ডব চালাতে পারে। ফলে, একদিকে যেমন প্রবল বর্ষণ হবে, অন্যদিকে, বন্যা ও ভূমিধ্বসের ঝুঁকিও বাড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টার বা এনএইচসি জানিয়েছে, সর্বোচ্চ বাতাসের গতি ও কেন্দ্রীয় চাপের দিক থেকে মেলিসা এ বছর বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়।
যুক্তরাষ্ট্রে বিবিসির নিউজ পার্টনার সিবিএস জানিয়েছে, ১৮৫১ সাল থেকে জ্যামাইকায় ঝড়ের রেকর্ড সংরক্ষণের পর থেকে এখন পর্যন্ত এটিই সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় যেটি আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আঘাত হানতে যাচ্ছে দেশটিতে।
জ্যামাইকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সোমবার সন্ধ্যায় জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই ঝড়ের প্রভাবে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
সোমবার গ্রিনিচ সময় সন্ধ্যায় ৬টায় এনএইচসির আবহাওয়ার বিশেষ সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, জ্যামাইকায় আজ রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত প্রবল ও প্রাণঘাতী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানবে। যার ফলে বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস দেখা দিতে পারে।
এই সতর্কবার্তার সময় ঘূর্ণিঝড় মেলিসা রাজধানী কিংস্টনের প্রায় ১৪৫ বা ২৩৩ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল এবং ঘণ্টায় প্রায় ছয় কিলোমিটার গতিতে উত্তর-পশ্চিমে অগ্রসর হচ্ছিল।
এনএইচসি পরিচালক মাইকেল ব্রেনান সতর্ক করে বলেছেন, "মঙ্গলবার পর্যন্ত ভয়াবহ আকস্মিক বন্যা ও ব্যাপক ভূমিধ্বসের আশঙ্কা রয়েছে। আপনারা কেউ ঘরের বাইরে যাবেন না"।
তিনি সতর্ক করে বলেন, "মেলিসার গতিবেগ শিগগিরই বাড়বে এবং ঝড়ের চোখ দ্রুত গতিতে দ্বীপজুড়ে অগ্রসর হবে। ঝড়ের চোখ আপনার এলাকায় এসে গেলে কেউ বাইরে বের হবেন না"।
এনএইচসি জানিয়েছে, আঘাত হানার পর পরবর্তী চার দিন জ্যামাইকার কিছু এলাকায় ভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে।
এনএইচসি'র উপপরিচালক জেমি রোম বলেছেন, মূলত মেলিসার ধীরগতির কারণে এই অতিবৃষ্টির সম্ভাবনা জ্যামাইকার জন্য ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
জ্যামাইকান সরকার রাজধানী কিংস্টনের কিছু অংশ থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জ্যামাইকার শিক্ষামন্ত্রী ডানা মরিস ডিক্সন বলেছেন, এমন ঝড় যা আমরা আগে কখনও দেখিনি, যেটি আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আঘাত হানতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, "অক্টোবর জুড়ে বৃষ্টি হয়েছে, তাই মাটি এখনও ভেজা। এরপর আবার টানা ও ভারি বৃষ্টি হলে অবশ্যই ভয়াবহ বন্যা ও পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধ্বস হতে পারে।"
মন্ত্রী আরও জানান, দুর্যোগ মোকাবিলায় দেশটিতে ৮৮১টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং সেগুলো সব জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
মার্কিন জাতীয় মহাসাগরীয় ও বায়ুমণ্ডলীয় প্রশাসনের একজন মুখপাত্র সিবিএসকে জানিয়েছেন, একটি হারিকেন হান্টার বিমান, যা তীব্র ঝড়ের তথ্য সংগ্রহ করে এবং ঘূর্ণিঝড়ের পথ আর তীব্রতা সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়, তীব্র অস্থিরতার সম্মুখীন হওয়ার পর একটি অভিযান বাতিল করতে বাধ্য হয়।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্ড্রু হোলনেস দ্বীপজুড়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের দ্রুত সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
এক্স হ্যান্ডলে দেওয়া বার্তায় তিনি লিখেছেন, "সব জ্যামাইকানকে অনুরোধ করছি প্রস্তুত থাকুন, ঝড় চলাকালে ঘরে থাকুন এবং সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ মানুন। আমরা এই ঝড় মোকাবিলায় আরও শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়াব।"
সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, "আমার ধারণা এই অঞ্চলের কোনো বাড়িঘরই ক্যাটাগরি ফাইভ এর ঘূর্ণিঝড় সামাল দিতে পারবে না। তাই বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটতে পারে"।
সদ্য সংবাদ/এসএইচ



























