শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

| ১২ আষাঢ় ১৪৩২

সদ্য সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ১৭ জুন ২০২৫

শিশু গোপালের দিন কাটে গর্তে দাঁড়িয়ে

শিশু গোপালের দিন কাটে গর্তে দাঁড়িয়ে

ঘরের মেঝেতে একটা ছোট গোলাকার গর্ত। সেই গর্তে শিশু সন্তানটিকে ঢুকিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। শিশুটির মাথা ও হাত দুটি যাতে বাইরে থাকে এমন করে গর্তটি করা হয়েছে। ক্ষুধার সময় প্রচণ্ড কান্নাকাটি করলে মা শিশুটিকে গর্তে ঢুকিয়ে খাওয়ান।

শিশুটির নাম গোপাল সাঁওতাল। বয়স সাড়ে তিন বছর। ধারণা করা হচ্ছে জন্ম থেকে শিশুটি শারীরিক প্রতিবন্ধী। মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার মুরইছড়া চা বাগানের সনচড়ি সাঁওতাল ও অনিল সাঁওতালের একমাত্র সন্তান।

শিশুটি স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াতে বা বসতে পারে না। তাই খাওয়ানো ও অন্যান্য পরিচর্যার জন্য মা সনচড়ি এই অভিনব গর্ত করেছেন। ঘরের মেঝেতে করা সেই গোলাকার গর্তে সন্তানকে দাঁড় করিয়ে খাওয়ান, যত্ন করেন। না হলে সে ভাঁজ হয়ে পড়ে থাকে।

মা সনচড়ি ঘরের কাজ সামলানোর পাশাপাশি সারাক্ষণ ছেলেকে দেখে রাখেন। বাবা অনিল সাঁওতাল চা বাগানে কাজ করেন। অভাব-অনটনের সংসারে সন্তানের চিকিৎসা করানো তাদের পক্ষে সম্ভব না হওয়ায় তারা শিশু সন্তানকে এভাবেই লালন পালন করছেন।

সনচড়ি সাঁওতাল জানান, শিশুটির চিকিৎসার জন্য সিলেটের খাদিমনগরের একটি সামাজিক প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানকার চিকিৎসক বলেছেন শিশুটিকে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দিতে হবে। এটাই তার উন্নতির একমাত্র পথ; কিন্তু এ ধরনের থেরাপি নিয়মিত নেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য নেই এই পরিবারের। এই শিশুটি কি সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা পাবে তাও তিনি জানেন না।

তিনি আরও বলেন, ছেলেটির কান্না আর কষ্ট আমি কী করে সহ্য করি। তাই বুদ্ধি করে এই ঘরের মেঝেতে একটা ছোট গোলাকার গর্ত। সেই গর্তে শিশু সন্তানটিকে ঢুকিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। শিশুটির মাথা ও হাত দুটি যাতে বাইরে থাকে এমন করে গর্তটি করা হয়েছে। ক্ষুধার সময় প্রচণ্ড কান্নাকাটি করলে মা শিশুটিকে গর্তে ঢুকিয়ে খাওয়ান। গর্তে ঢোকালে ছেলেটি একটু দাঁড়াতে পারে। সামর্থ্য থাকলে যন্ত্রপাতি কিনে আনতাম। এরকম প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের জন্য নাকি ডিজাইন করা অনেক যন্ত্রপাতি আছে।

একমাত্র সন্তানটি যেন একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, নিজের মতো করে হাঁটতে পারে এটাই একমাত্র চাওয়া তার বাবা-মায়ের। নুন আনতে পান্তা ফুরানোর পরিবারে প্রতিবন্ধী ছোট্ট শিশুটি বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকবে সেটা কারো কাম্য হতে পারে না।

বিষয়টি কবি ও সাংবাদিক সঞ্জয় দেবনাথের মাধ্যমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে নেটিজেনদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়ে। চোখে পড়ে কুলাউড়া উপজেলা প্রশাসনের।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন সরেজমিন শিশুটির বাড়িতে যান। তিনি শিশুটির খোঁজখবর নেন। সেই সঙ্গে শিশুটির জন্য প্রতিবন্ধী ভাতার সুবর্ণ নাগরিক কার্ড তুলে দেন।

এদিকে ১৭ জুন শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুলাউড়া শহরে নিয়ে আসেন তার বাবা-মা। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সাঈদ এনামের চেম্বারে। ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, শিশুটির সিপি (সেলিব্রাল পালসি) রোগে আক্রান্ত।

বাংলাদেশে অনেক শিশু এ রোগে আক্রান্ত। তাকে সুস্থ করে তুলতে হলে প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা। তবে মাটির এই গর্তটি বন্ধ করে বিকল্প ওয়াকার বা হুইলচেয়ারে শিশুটিকে অভ্যস্ত করতে হবে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন জানান, বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুততার সঙ্গে সুবর্ণ নাগরিক কার্ড প্রস্তুত করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি। তাছাড়া শিশুটির পরিবারের জন্য এক বছরের ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।

সম্পর্কিত বিষয়: