শুক্রবার, ০৮ আগস্ট ২০২৫

|২২ শ্রাবণ ১৪৩২

সদ্য সংবাদ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৬:০৮, ৯ জুলাই ২০২৫

ব্রিটেনের পোস্ট অফিস কেলেঙ্কারি: ‘১৩ আত্মহত্যা’ মর্মান্তিক পরিণতি

ব্রিটেনের পোস্ট অফিস কেলেঙ্কারি: ‘১৩ আত্মহত্যা’ মর্মান্তিক পরিণতি
ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ বিচারিক ব্যর্থতা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে পোস্ট অফিস কেলেঙ্কারি, যা শত শত নিরীহ কর্মীকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসিয়ে দেয় এবং অনেককে চরম পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়। রাষ্ট্রীয় তদন্তে উঠে এসেছে, ত্রুটিপূর্ণ কম্পিউটার সিস্টেমের দায় কর্মীদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার ফলে অন্তত ১৩ জন আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে তদন্তপ্রধান উইন উইলিয়ামস জানান, পোস্ট অফিসের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জেনে-বুঝেই ত্রুটিপূর্ণ কম্পিউটার সিস্টেমকে নির্ভুল হিসেবে প্রচার করে গেছেন। ২০০০ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ‘সাবপোস্টমাস্টার’ নামে পরিচিত শাখা ব্যবস্থাপকরা লোকসানের দায়ে অভিযুক্ত হন, অথচ প্রকৃতপক্ষে দায় ছিল জাপানি কোম্পানি ফুজিৎসুর তৈরি ত্রুটিপূর্ণ সফটওয়্যারের।

এই সময়ে প্রায় এক হাজার জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়, যাদের মধ্যে অনেকে জেল খেটেছেন, কেউ কেউ হয়েছেন দেউলিয়া, আবার কেউ আত্মহত্যা করেছেন। তদন্তে ১৭টি করুণ ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে—যার মধ্যে রয়েছে মানসিক ভেঙে পড়া, পারিবারিক সম্পর্ক ভাঙন, শারীরিক অসুস্থতা এবং আত্মহত্যা।

তাদেরই একজন মার্টিন গ্রিফিথস, যিনি হিসাবের গড়মিল দেখিয়ে চাকরি হারানোর পর চলন্ত বাসের সামনে দাঁড়িয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। গুরুতর আহত হয়ে পরে তার মৃত্যু হয়। এমন আরও ছয় সাবপোস্টমাস্টার ও সাতজন কর্মীর আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে, যাদের পরিবার বলছে, এই কেলেঙ্কারির চাপই ছিল আত্মহত্যার প্রধান কারণ।

উইলিয়ামস তার ১৬২ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে ভুক্তভোগীদের “পূর্ণাঙ্গ ও ন্যায্য” ক্ষতিপূরণ প্রদানের আহ্বান জানিয়েছেন। বিনামূল্যে আইনি সহায়তা, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের সহায়তা, এবং দ্রুত ক্ষতিপূরণ প্রক্রিয়া চালু রাখার সুপারিশও রয়েছে প্রতিবেদনে।

বাণিজ্যমন্ত্রী জনাথন রেনল্ডস বলেছেন, এই প্রতিবেদন হলো ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য একটি “গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক” এবং তিনি যথাসম্ভব দ্রুত ও ন্যায্য ক্ষতিপূরণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

তদন্তে ২২৬ দিন শুনানি চলেছে এবং ২৯৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। পোস্ট অফিসের ভূমিকা নিয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা থাকবে প্রতিবেদনের দ্বিতীয় খণ্ডে, যা শিগগিরই প্রকাশিত হবে।